করোনায় আক্রান্ত দেশ। এইসাথে দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ জনজীবনের সবকিছু কেমন যেন আচমকা থমকে গেছে। পৃথিবী জুড়ে মানুষ নানাধরনের মহামারির গল্প শুনলেও এবার নিজেরাই এর মূখোমূখি। এধরনের অবস্থা মোকাবিলার জন্য মানুষের কিংবা দেশের যে ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন হয় সেগুলো আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নেই বললেই চলে। তবুও সীমিত সামর্থ দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়, মোকাবিলা করতে হয়। ঠিক এরকমের অবস্থায় দেশের অন্যান্য খাতের মতো সবচেয়ে বড় সংকটে আছে শিক্ষা খাত। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ হয়ে আছে করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে। প্রায় তিন মাসের অধিককাল ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ এবং সেপ্টেম্বরের আগে তা খোলার কোনো সম্ভাবনা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই লম্বা সময় ধরে শিক্ষার্থীরা স্কুলে ক্লাসরুম, সহপাঠী এবং খেলার মাঠের বাহিরে অবস্থান করছে। শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেবার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলছে বা বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংসদ টিভির মাধ্যমে যেমন শিক্ষার্থীদের পাঠদান হচ্ছে, তেমনি অনলাইন শিক্ষায় বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে, যা সময়ের বিবেচনায় প্রশংসনীয় বটে। দেশের একটি অংশের শিক্ষার্থীদের এসব সুযোগের আওতায় নিয়ে আসা গেলেও বড় অংশ এসব সুবিধা ব্যবহার করতে সমর্থ হচ্ছে না। একটি অংশের শিক্ষার্থীদের রেডিও, টিভি, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই বললেই চলে।
এমনকি পরিসংখ্যান বলছে, দেশের অর্ধেক শিক্ষার্থীও এসবের আওতায় নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এক্ষেত্রে গ্রামের চেয়ে শহরের শিক্ষার্থীরা খানিকটা এগিয়ে থাকবে। গ্রামেও কেউ কেউ হয়ত এ সুযোগ পাবে বটে কিন্তু উল্লেখযোগ্য অংশই বঞ্চিত থাকছে। শিক্ষাদানের এ প্রক্রিয়া হয়ত খানিকটা সহায়ক কিন্তু কতটা কার্যকর তা নিয়েও ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। ইতোমধ্যে নগরের শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা অভিযোগ করছেন তাদের সন্তানরা অনেক বেশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। দেশে সেফ ইন্টারনেট ব্যবহারের চর্চা না থাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে শংকায় আছেন অভিভাবকরা। অন্যদিকে বন্ধুহীন হয়ে ঘরবন্দিত্বের কারণেও শিক্ষার্থীদের মনজগতেও তৈরি হচ্ছে সংকট। শিক্ষার্থীদের বাড়ছে ইলেকট্রনিক ডিভাইস নির্ভরতা।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনার ছোবলে লম্বা সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যে শিশু শিক্ষার্থীদের মারাত্মক সঙ্কটের চিত্র উঠে এসেছে একটি বেসরকারি সংস্থার এক জরিপে। জানা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিশুদের একটি অংশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে অবস্থান করলেও লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেও ঘরের বাইরে যাচ্ছে, ১৮ শতাংশ শিশু।
তিন কোটি ১০ লাখ শিশুর মধ্যে ১৮ শতাংশ একটি বিশাল সংখ্যা উল্লেখ করে জরিপ রিপোর্টে উদ্বেগের সাথে বলা হয়েছে, করোনায় আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ভয়াবহ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে সময় পার করছে। শিশুর প্রতি সহিংসতার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। সংসদ টিভি ও অনলাইনে ক্লাস অধিকাংশ শিশুকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই এসব অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে না।
জরিপে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের এই মহামারি লেখাপড়ায় অনীহা জাগিয়েছে ১৩ শতাংশ শিশুর। যার ফলে ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা ছাড়াই ঘরে দিন কাটাচ্ছে। এই ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রায় কিছু না করা বা একেবারেই অলস সময় কাটানোর পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। এদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তারা কোনরকম নির্দেশনাই পাচ্ছে না। এদের বেশিরভাগই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং গ্রামে বাস করে।দূরশিক্ষণে কম অংশগ্রহণের তালিকায় রয়েছে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী (২৫ শতাংশ), মাদ্রাসা শিক্ষার্থী (৩২ শতাংশ), বিশেষভাবে সক্ষম শিশু (৩৯ শতাংশ) এবং গ্রামে বসবাসকারী শিক্ষার্থী (৪০ শতাংশ)।কম অংশগ্রহণের কিছু কারণ জানা গেছে জরিপে। মূল কারণ-প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অভাব, যেমন (টেলিভিশন, ইন্টারনেট, বিদ্যুত ব্যবস্থা, ডিশ কানেকশন ইত্যাদি)।
ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা কম অংশগ্রহণ করছে কারণ ভাষাগত বাধা এবং তথ্য আদানপ্রদানে ব্যাঘাত হওয়া। পড়াশোনা বাদেও এই লকডাউনের সময়ে শিক্ষার্থীরা আরও নানাবিধ কাজে সময় দিয়েছে। যদিও বেশিরভাগ শিশুই (৫৫ শতাংশ) গৃহস্থের কাজে বাড়ির সদস্যদের সহায়তা করেছে, কিন্তু তারপরও একটা বড় অংশ সময় কাটিয়েছে আপাত অর্থহীন কাজে। যেমন- পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে (২৭ শতাংশ), মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট বা অনলাইনে গেম খেলে (১৯ শতাংশ) ইত্যাদি। মেয়ে শিক্ষার্থীরা ছেলে শিক্ষার্থীর তুলনায় ঘরের কাজে বেশি সম্পৃক্ত (৪৪ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় ছেলে শিক্ষার্থীর হার যেখানে ৩২ শতাংশ)। অন্যদিকে ছেলে শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক বেশি সময় কাটিয়েছে আড্ডায় (২১ শতাংশ), ইন্টারনেট আর অনলাইন গেমসে (১৭ শতাংশ), খেলাধুলায় (১০ শতাংশ) এবং টিভি দেখায় (১০ শতাংশ)।
জরিপে দেখা গেছে- লকডাউন পরিস্থিতিতে শিশুর প্রতি সহিংসতার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে উল্লেখ করে জরিপে বলা হয়েছে, ‘তিন শতাংশ শিশু লকডাউনে সহিংসতার শিকার। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ মানসিক নির্যাতনের শিকার, এছাড়াও রয়েছে শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, জোর করে আটকে রাখা এবং জোর করে কাজ করানো। এই হিসাবটা যদি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা হয় তবে তিন শতাংশ একটা বিশাল সংখ্যায় পরিণত হবে। যেমন সবচেয়ে খারাপ সহিংসতার উদাহরণ হলো, প্রচন্ডভাবে ভীত থাকা, যার শিকার ১৬ শতাংশ বিশেষভাবে সক্ষম শিশু (শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন শিশু)। শতকরা ২ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী সহিংসতার শিকার হয়েছেন এ সময়ে।
অন্যদিকে গ্রামীণ এবং শহুরে শিক্ষার মধ্যেকার যে বৈষম্য বিদ্যমান ছিল তা আরও বাড়বে বলে আপাত দৃষ্ঠিতে মনে করা হচ্ছে। করোনা পরবর্তি বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলেও অতি দরিদ্র ও পেটের দায়ে শিশুশ্রমের দিকে ঝুঁকে পড়বে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুরা। মোট শিক্ষার্থীর অন্তত ৩০ শতাংশ বা এর বেশি ঝড়ে পড়তে পারে বলে শিক্ষা নিয়ে কর্মরত সংগঠনসমূহ দাবী করছে। ফলে ঝড়েপড়াসহ শিশু শ্রম বৃদ্ধি পাবে। এ শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে না ফেরার আশঙ্কা বেশি। মহামারি-উত্তর পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষেই খাদ্য সংকটের পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণ ক্রয় এবং শিক্ষাব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আর তাই খাবারের অভাবের জন্য তাদের পরিবার, শিক্ষার্থীদের শ্রম দিতে বাধ্য করবে। চলমান মহামারির ফলে অনেক গরিব পরিবার আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়বে, কাজ হারাবে। সেক্ষেত্রে তাদের সন্তানদের স্কুলে না পাঠিয়ে তারা আয়মূলক কাজে পাঠাতে চাইবে। সংসারের আয় বাড়াতে চাইবে। এই ঝড়েপড়া শিশুদের মধ্যে সর্বাধিক মেয়েশিশু থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। করোনাজনিত কারণে যে দরিদ্র্যতা বাড়বে, তাতে পরিবারের প্রতিদিনের ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এর ফলে মেয়েশিশুদের শিক্ষা অব্যহত রাখা পরিবারের জন্য কঠিন হবে। পরিবারে মেয়েশিশুরা হয়ে উঠবে বোঝা। ফলে মেয়েশিশুদের বাল্যবিবাহের হার বাড়বে। পাশাপাশি করোনার কারণে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পুষ্টিহীনতা বাড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। মোটকথা শিক্ষাব্যবস্থার একটি বড় অংশ শিক্ষার্থীরা পড়তে যাচ্ছে কঠিন চ্যালেঞ্জের মূখোমূখি। কিন্তু আমরা কেউ এটি প্রত্যাশা করি না যে, সরকারি এবং বেসরকারি দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফলে শিক্ষায় যে গতি এসেছে তা নিম্নমুখী হোক। শিশু শ্রমিক তৈরি হোক। ঝড়েপড়া আর বাল্যবিবাহের হার বাড়ুক। তাই সময় থাকতেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং তা শুরু করতে হবে এখন থেকেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ সংকট মোকাবিলায় সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। স্কুলগুলো খোলার পড়ে সকল স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের পুরানো তালিকা ধরে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য প্রাথমিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে স্কুল খোলার পূর্বে এলাকায় মাইকিং করে সকল শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে স্কুলে উপস্থিত হবার আহ্বান জানানোসহ স্কুল খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিসহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে একজন করে প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জরুরি সভার আয়োজন করতে হবে। এই সভা থেকে সকলকে সচেতন ও সরকারের এ বিষয়ক নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হবে। স্কুলের অগ্রগামী শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের নিয়ে স্কুলভিত্তিক একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা যেতে পারে। যারা প্রতিদিনের অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনবেন। অন্যদিকে শিক্ষকদের দিয়ে ড্রপআউট এর শিকার হতে পারে এমন সম্ভাব্য শিক্ষার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করে তাদের জন্য বৃত্তি বা দুপুরের খাবাবের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মার্চ মাস থেকে আগামী ডিসেম্বর ২০ পর্যন্ত বেতন মওকুফ এর বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনা করতে হবে। এছাড়াও যারা সরকারি বিভিন্ন সেফটিনেট কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভূগি, তাদের সন্তানরা যাতে নিয়মিত স্কুলে যায় সে বিষয়ে তাদের নির্দেশনা পৌঁছে দিতে হবে। মোটকথা, শিক্ষা, সমাজসেবা, মহিলাবিষয়ক এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সম্মিলিত উদ্যেগ প্রয়োজন হবে এসংকট মোকাবিলায়।
শিক্ষার্থীদের বিবেচনায় রেখে সরকারি, বেসরকারি সাহায্য বা ত্রাণ তৎপরতার চালানোসহ শিক্ষা উপকরণ সহজলভ্য করার পাশাপাশি পরীক্ষা পদ্ধতিও সহজতর করতে হবে। মনে রাখতে হবে হবে লম্বা সময়ের বিরতির পরে স্কুলে ফিরে শিক্ষার্থীরা যাতে করে কঠিন চাপের মূখে না পড়েন।উল্লিখিত জরিপে বেশিরভাগ উত্তরদাতা (৫৪ শতাংশ) স্কুল শুরু হওয়ার পর অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। যদিও করোনাভাইরাস সংক্রামণ বাড়ছে তবু ৪৯ শতাংশ উত্তরদাতা কিছুদিনের মধ্যেই স্কুল খোলার পক্ষে মত দিয়েছেন। অংশগ্রহণকারী উত্তরদাতাদের ৩৫ শতাংশ সিলেবাস কমিয়ে আনার পক্ষে পরামর্শ দিয়েছেন এবং ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা শিথিল পরীক্ষার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্বিক ট্রমা থেকে বের করতে অংশগ্রহণকারীরা কিছু সুপারিশ করেছিলেন, যার মধ্যে স্কুল শুরু হওয়ার পর বিনোদন কার্যক্রম শুরু করা, উপহার প্রদান বা উপবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি, অনলাইন বা দূরশিক্ষণ কার্যক্রম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি স্থানীয় সরকারকে পুরো বিষয়টি মনিটরিং এর দায়িত্ব প্রদান করতে হবে, যাতে তারা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন। সরকার নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই তার বর্তমানে বিদ্যমান শক্তির এবং সামর্থের ব্যবহার করতে হবে। এর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আসলে এগুলো হতে পারে একটি সাময়িক এবং তাৎক্ষণিক উদ্যোগ। এধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে সরকারের শুভ ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ হবার ফলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরা এক ধরনের কর্মহীন হয়ে সময় পার করছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষকদের জন্য এসময়ে অনলাইন ভিত্তিক নানা ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এই সাথে যাতে করে সকল শিক্ষক তার ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে প্রয়োজনে মোবাইলে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন, পড়াশনুার বিষয়ে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এরপাশাপাশি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা যাতে করে সরকারি এবং বেসরকারি সহয়তার আওতায় আসে সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব দিতে হবে শিক্ষকদের। ফলে শিক্ষকদের সাথে সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয়, অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহের একটি যোগসুত্র তৈরি হবে। শিক্ষার্থীদের ড্রপ আউটের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে। এসবের এর পাশাপাশি এ সংকট মোকাবিলায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। অতি অবশ্যই এসব পরিকল্পনার সাথে শিক্ষক, স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটি, অভিভাবক, স্থানীয় সরকার এবং বেসরকারি সংগঠনসমূহকে যুক্ত করতে হবে। কারণ সকলকে মনে রাখতে হবে এসব উদ্যোগ শুধুমাত্র শিক্ষা সংকট মোকাবিলার জন্য নয়। এ সংকট মোকাবিলার মধ্যে দিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী পুরুষের মধ্যেকার বৈষম্য বিলোপ, দক্ষ্য জনশক্তি গড়ে তোলা সহ দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। যেকোন দূর্যোগ বা সংকটকালে মানুষ বিপদে পড়ে একথা সত্যি। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এসব সংকট মানুষের মধ্যে নতুন ধরনের সম্ভাবনা এবং এই সাথে মানুষের মধ্যে নতুন ধরনের প্রাণশক্তিরও সঞ্চার করে। মানুষকে বাঁচতে হবে। সামনে আগাতে হবে। আর তাই এই নতুন প্রজন্মের দিকে সময় থাকতেই সুনজর দেয়ার পাশাপাশি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবী সকল মহলের। সুতরাং সময় থাকতেই প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে যদি তা সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় তাহলে সাফল্য আসবেই। মনে রাখতে হবে রাত যত গভীর হয় ভোরের সম্ভাবনা ততই বাড়ে।
চন্দন লাহিড়ী, মুক্ত সাংবাদিক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন- স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট এ কর্মরত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন