বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন থাকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। সঠিক তথ্য জানা না থাকলে বহুদিনের লালিত স্বপ্নও মাঝপথে এসে ব্যাহত হয়। স্বপ্ন বাস্তবায়ন তখন সুদূরপরাহত হয়। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা থাকলে প্রথমেই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার উচিত স্বচ্ছ ধারণা রাখা।
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের কাছে জাপানের নাম তালিকার শীর্ষের দিকেই থাকে। সূর্যোদয়ের এ দেশটিতে বর্তমানে বহু বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। আর এর মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পরিমাণটাও নেহাত কম নয়। জাপানে এত বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী আকৃষ্ট হওয়ার কারণও আছে অনেক। সে বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আসে দেশটির উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ, জাপানের বন্ধুভাবাপন্ন সংস্কৃতি আর আবহাওয়ার কথা।
এসব দিক বিবেচনা করলে জাপানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আপনার আগ্রহ বাড়বেই। কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দেশে গিয়ে পড়াশোনা করার ঝক্কিটাও কম নয়। জাপানে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে শিক্ষার্থীরা প্রথমেই যেসব সমস্যার মুখোমুখি হন, সেটি হলো প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব। কীভাবে সেখানে যাবেন, কোথায় পড়বেন, কীভাবে ভর্তি হবেন, পড়াশোনার খরচ কেমন, দ্রব্যমূল্যÑ এসব জানতে গিয়ে পড়–য়াদের প্রচুর কাঠ-খড় পোড়াতে হয়।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জাপান শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত জাপান শিক্ষার্থী সেবা সংস্থা বাংলায় একটি সহায়িকা বই প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হলো আজকের এ আয়োজনে।
জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য জাপানে বেশকিছু উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এগুলো হলো প্রযুক্তি কলেজ, পেশাদার প্রশিক্ষণ কলেজ, জুনিয়র কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্র্যাজুয়েট স্কুল। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়Ñ জাতীয়, স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি। বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করতে পারবেন। জাপানে উচ্চশিক্ষা শুরু হয় ১২ বছর মেয়াদি প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা শেষ হওয়ার পর। তাই জাপানে যাওয়ার আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে বাংলাদেশ থেকে ১২ বছর মেয়াদি বিদ্যালয় শিক্ষা শেষ করেছেন কি না। সাধারণত আমাদের দেশের জন্য উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান পাস করলেই আবেদন করা যাবে জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়।
বিভিন্ন কোর্সগুলোর ধারণা
জাপানে রয়েছে নানামুখী বিষয়ে পড়াশোনা করার সুবিধা। দেশটির প্রযুক্তি কলেজ, পেশাদার প্রশিক্ষণ কলেজ, জুনিয়র কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্র্যাজুয়েট স্কুলগুলো থেকে আপনি বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ডক্টরাল, ডিপ্লোমা, অ্যাডভান্স ডিপ্লোমাসহ বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন। এসব ডিগ্রির কোর্সগুলো সাধারণত দুই থেকে ছয় বছর মেয়াদি হয়ে থাকে।
ভর্তির যোগ্যতা
জাপানে পড়াশোনা করতে হলে জাপানি ভাষা অবশ্যই জানতে হবে। এজন্য জাপানি ভাষার ওপর কমপক্ষে ৬ মাসের কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। এর বাইরেও কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য টোফেল সিবিটি স্কোর ১৫০-এর বেশি অথবা টোফেল আইবিটি স্কোর ৫২-এর বেশি থাকতে হবে। ভাষাগত যোগ্যতা প্রমাণে আন্তর্জাতিক ছাত্র হিসেবে জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। আপনি যদি এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় এবং ব্যাচেলর্স ডিগ্রিতে উত্তীর্ণ হন, তাহলে মাস্টার্সে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। অ্যাসোসিয়েটেড ডিগ্রি, ব্যাচেলর্স ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি ও ডক্টরেট প্রোগ্রামে পড়াশোনা এবং গবেষণার জন্য আপনি জাপানে যেতে পারেন।
কোথায় পাবেন ভর্তির তথ্য
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদালয় থেকে প্রকাশিত ব্রোশিয়ার, আবেদনের গাইডবুক থেকেও পাওয়া যায় ভর্তির নির্দেশিকা। তবে অনলাইনের এ যুগে ওয়েবসাইটগুলো থেকেই একজন শিক্ষার্থী পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেতে পারেন।
একনজরে ভর্তি প্রক্রিয়া
জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তির জন্য কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ভর্তির আগেই যদি এ ব্যাপারে টুকটাক জেনে নেওয়া যায়, তাহলে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারবেন অনেকটাই।
পরিকল্পনা এবং তথ্য সংগ্রহ : প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে আপনি কোন বিষয়ে পড়বেন। এ বিষয়ে জাপানে কোন ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়, তা-ও জেনে নিতে হবে। পাশাপাশি পছন্দের কোর্সটিতে খরচ কেমন সেটাও জেনে নেওয়া জরুরি।
স্কুল বাছাই : সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের পরই আসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের বিষয়টি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে পছন্দমাফিক একটি তালিকা তৈরি করে নিতে পারেন। তারপর সেই তালিকা থেকে নিতে পারেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় মানের পরীক্ষা : জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে Examination for Japanese University Admission for International Students (EJU), Japanese Language Proficiency Test (JLPT), TOEFL, IELTS, TOEIC প্রভৃতি মূল্যায়ন পরীক্ষা। তবে কোনো কোনো বিষয়ে পড়ার জন্য এসব পরীক্ষার প্রয়োজন না-ও হতে পারে।
ভর্তির জন্য আবেদন করা : পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই আবেদনের নথি প্রস্তুত করে আবেদন ফি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
আপনার আকাক্সিক্ষত এনট্রান্স পরীক্ষা : কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে একটি সাক্ষাৎকারের মুখোমুখি হতে হবে। এছাড়া একটি একাডেমিক কৃতিত্ব পরীক্ষা দিতে হয় উত্তীর্ণদের।
ভর্তি : এই ধাপে নির্বাচিত প্রার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন। ভর্তির জন্য প্রথম বছরের একাডেমিক ফি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
জাপানে অধ্যয়নের প্রস্তুতি : ভর্তির পরপরই ভিসা, জাপানে যাওয়া ও সেখানে থাকার প্রস্তুতি নিতে হবে। ভিসা পাওয়ার পরপরই বাসস্থান, বিমানের টিকিট, বীমা প্রভৃতি বিষয়গুলো ঠিক করে নিতে হবে শিক্ষার্থীকে।
আছে বৃত্তির সুবিধা
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য জাপানে বিভিন্ন বৃত্তি ও টিউশন ছাড়ের সুবিধা আছে। এ সুবিধার আওতায় সম্পূর্ণ বিনা খরচেই একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন। বিভিন্ন সরকারি বৃত্তি ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বৃত্তি দিয়ে থাকে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব বৃত্তির ব্যবস্থা আছে। একজন শিক্ষার্থী এসব বৃত্তিতে নির্বাচিত হয়ে জাপানে পড়ালেখার জন্য যেতে পারেন। আবার সেখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরও আবেদন করা যায় বৃত্তিগুলোয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন