বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল একটি জনবহুল দেশ। দুইশত বছরের অধিক সময় ধরে উপনিবেশিক শাসনের কষাঘাতে অর্থনৈতিক ভাবে আজও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ন হতে পারিনি। পরিশ্রমী মানব সম্পদের আধিক্য থাকার কারনে কৃষি নির্ভর এ দেশটির মানুষ নানাবিদ সমস্যার মাঝেও নিজেদের কে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৭১ সালে পরাধীনতার গ্লানি মুছে একখন্ড স্বাধীন ভু-খন্ড ও লাল সবুজ পতাকার মাধ্যমে পৃথীবির বুকে বাংলাদেশ নামক একটি দেশ জন্ম লাভ করে।
উন্নয়নের পথে রয়েছে নানান বাঁধা। যা থেকে উত্তোরনে ও উন্নয়নে পেশাগত সমাজকর্ম শিক্ষা ও অনুশীলন হতে পারে অন্যতম সহায়ক শক্তি। সমাজকর্ম শিক্ষা: ব্যক্তি, দল কিংবা সমস্টির সমস্যার সমাধানে উন্নত দেশের তুলনায় আজও আমরা অনেক পিছিয়ে। বাঙালির এই সমস্যা বহুদিনের। তাই তো স্বধীনতার পূর্বেই ইংল্যান্ড সমাজকর্ম পেশার পেশাগত স্বীকৃতি লাভেরও কয়েকশত বছর পর হলেও ১৯৫৭-৫৮ সালে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।
মানুষের সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভুমিকা পালনের জন্য প্রতিবছর এখান থেকে কয়েক শত গ্রাজুয়েট (সমাজকর্মী) বের হয়। এরপর সমাজকর্ম শিক্ষার বিস্তার ঘটানো ও সমাজ উন্নয়নে সমাজকর্মীদের গুরুত্ব অনুধাবন পূর্বক সমাজকর্ম শিক্ষার বিস্তার ঘটানো শুরু হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুস্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সমাজকর্ম অনুশীলন ও সামাজিক উন্নয়ন:
১. একবিংশ শতাব্দিতে দাঁড়িয়ে আজও আমরা সমাজকর্ম পেশার পেশাগত স্বীকৃতি আদায় করতে ব্যর্থ। পেশাগত স্বীকৃত ও অনুশীলনের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে সমাজকর্ম গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখতে পারে।
২. বাংলাদেশে স্বতন্ত্র একটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থাকার পরও সমাজকর্মে অধ্যায়ন কারি শিক্ষারতীদের নিয়োগ না দিয়ে সাধারণ নিয়োগ প্রক্রিয়ার অন্যান্যদের নিয়োগ দেয়া হয়।
৩. সমাজসেবা কর্মকতা হিসাবে যাদের নিয়োগ দেয়া হয় তাদের অধিকাংশই সমাজকর্ম বিষয়ে শিক্ষা বহির্ভুত যার ফলে সমাজকর্ম সম্পর্কে তাদের কোন ধারনা থাকেনা।
৪. সমাজকর্ম বিষয়ে জ্ঞান না থাকার কারণে তারা যথাযথ ভাবে উপযুক্ত সেবা দিতে ব্যর্থ হয়।
৫. সামাজিক সমস্যা, সামাজিক সাহায্য, সমাজসেবা, সম্ন্বয় ও উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে পূর্ব ধারনা না থাকায় এ গুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেনা।
৬. ব্যক্তি, দল, সমাজ ও সমস্টির অনুধ্যান অর্থাৎ প্রত্যেকের সম্পর্কে ভালভাবে জানা ও এসকল সমস্যার সমাধানে ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভা, সম্পদ ও সুযোগ কে কাজে লাগানো।
৭. সক্ষমতা যাচাই পূর্বক ব্যক্তিকে সেবা প্রদান করা যা কিনা সমাজকর্ম শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তির দ্বারাই সম্ভব।
৮. সমস্যার প্রকৃত কারন অনুসন্ধান যা সমাজকর্ম শিক্ষার পাঠ্যসুচিতে বিদ্যমান কিন্তু মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ পাওয়া সমাজসেবা কর্মকর্তাদের অধিকাংশেরই সে সম্পর্কে ধারনা নাই।
৯. স্কুল সমাজকর্ম, শিল্প সমাজকর্ম, হাসপাতাল সমাজকর্ম পদ গুলো নাই যা কিনা সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তিদের সমস্যার সমাধানে কাজ করে তাদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
১০. সমাজ উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় সামাজিক সমস্যা, আর এ সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মীর দক্ষতা, যোগ্যতা ও কাজ করার সুযোগ থাকতে হবে। যা দৃশ্যত অনুপস্থিত।
১১. দেশের উন্নয়নে উন্নয়ন সংস্থা গুলো দেশি বিদেশি অর্থ সংগ্রহ করে কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু সেটা দীর্ঘ স্থায়ী সমাধান হচ্ছেনা, কারন সেখানেও পেশাগত সমাজকর্মীর জ্ঞান ও দক্ষতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
১২. সমাজকর্ম শিক্ষার আশানুরুপ বিস্তার এখনও সম্ভব হয়নি। যা অতীব জরুরী।
মানুষ তার নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে বেশিরভাগ সময়ই অজ্ঞ ও অসচেতন থাকে যা ব্যক্তির উন্নয়নে অন্যতম অন্তরায়। সমাজকর্ম শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটানো বিশেষকরে সকল সরকারী-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর পর্যায়ে সমাজকর্ম শিক্ষা নিশ্চিত করা। সমাজকর্ম শিক্ষায় শিক্ষিত ও উচ্চতর ডিগ্রি ধারীদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চাকরিতে অগ্রাধিকার দেয়া। যারা প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান, দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারে।
মো: দিপুল হোসেন, সহকারি অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগ, দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন