ফ্যাশন জগতে চমক লাগানো অনুষঙ্গ হাই হিল। ছবি: সংগৃহীতসোফার ওপর শুয়ে থাকা মেরিলিন মনরোর পা দুটো খেয়াল করলে এক জোড়া কালো রঙের হাই হিল চোখে পড়বে। কালো রঙের হাই হিল জোড়া তাঁকে যে আরও কমনীয় করে তুলেছিল, তা বলাই বাহুল্য। ইতিহাস বলছে, মনরোর মতো সুন্দরীদের পায়ে হাই হিল ওঠার আগে তা ছিল প্রাচীন পারস্যের ঘোড়সওয়ার তিরন্দাজ সৈনিকদের ব্যবহারের জিনিস। তবে অত সরু হিল ছিল না তখন—এ গল্প দশম শতকের। পরবর্তী সময়ে বারো শতকে হাই হিলের মতো জুতা দেখা যায় ভারতের রামাপ্পা মন্দিরের গায়ে নির্মাণ করা মূর্তিতে। এরপর বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হাই হিলের বিভিন্ন ধরন দেখা যায়।
সতেরো শতকের গোড়ায় পারসিয়ানরা ইউরোপে দূতাবাস খুললে হাই হিল জুতা ছড়িয়ে পড়ে সেখানে। ইউরোপীয় অভিজাত মানুষেরা হাই হিল পরতে শুরু করেন। আভিজাত্য প্রকাশে সে সময় জুতার হিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ক্লাউস কার্ল তাঁর সুজ নামে বইয়ে লিখলেন, সাধারণ মানুষের জুতার হিল হবে আধা ইঞ্চি উঁচু, মধ্যবিত্তদের এক ইঞ্চি, নাইটের দেড় ইঞ্চি, সম্মানিত ব্যক্তিদের জন্য দুই ইঞ্চি এবং যুবরাজের জন্য আড়াই ইঞ্চি উঁচু।
উল্লেখ করতে হয়, ষোলো-সতেরো শতকে নারী ও পুরুষ পোশাক, অলংকারসহ প্রায় একই রকম ফ্যাশন অনুষঙ্গ ব্যবহার করত। জুতার বেলাতেও তাই ছিল। তবে নারীদের জুতার হিল ছিল সরু আর পুরুষদের মোটা। জুতার হিলের এই চিরাচরিত আকৃতিগত ধারণার কিছুটা পরিবর্তন ঘটে সতেরো শতকে। এ সময় পুরুষেরা চৌকো, মজবুত ও অনুচ্চ এবং নারীরা সরু, লম্বা ও বাঁকযুক্ত হিল ব্যবহার শুরু করে।
পরবর্তীকালে, আঠারো শতকে ‘এনলাইটেনমেন্ট’–এর ধারণা বিকশিত হলে মানুষের জীবনযাপনে পরিবর্তন আসে। শিক্ষা-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান- কৃৎকৌশলের মতো এই আলোকায়নের অভিঘাত লাগে মানুষের ফ্যাশনে। এ সময় অলংকারের ব্যবহার, কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক উজ্জ্বল রঙের ধোপদুরস্ত পোশাকসহ অযাচিত ফ্যাশন–অনুষঙ্গ ত্যাগ করা শুরু করে পুরুষেরা।
ধারণা করা হয়, ১৭৪০ সালের দিকে পুরুষেরা পুরোপুরি হাই হিল ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে হাই হিল নারীদের পা থেকেও উধাও হয়ে যায় মূলত বাড়ির বাইরে কাজে যাওয়ার প্রয়োজনের জন্য।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি ইউরোপের নারী ফ্যাশনে হাই হিল আবার ফিরে আসে মূলত ফ্যাশন ফটোগ্রাফি, ‘পিন-আপ’ ফটোগ্রাফির হাত ধরে। আর একুশ শতকে পুরুষদের জন্য আসে হিলযুক্ত কাউবয় বুট। এ সময় ফ্রান্সের পোস্টকার্ডে ন্যুড মডেলদের পায়ে হাই হিল দেখা যেত।
‘হাই হিল ব্যবহার স্বাস্থ্যসম্মত নয়’ বলে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বিভিন্ন গবেষণা ও প্রচারণা। কিন্তু তাতেও ভাটা পড়েনি ফ্যাশন জগতের এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী অনুষঙ্গটির—ভাটা পড়ার আশঙ্কাও আপাতত নেই।
সূত্র:
১. হোয়াই ডিড মেন স্টপ অয়্যারিং হাই হিলস? উইলিয়াম ক্রেমার, ২৫ জানুয়ারি ২০১৩, বিবিসি অনলাইন।
২. ফ্রম ম্যানলি টু সেক্সি: হিস্টরি অব দ্য হাই হিল, ড. লিসা ওয়েড, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, দ্য সোসাইটি পেজেস।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন