‘অন্ট্রাপ্রেনার’ (Entrepreneur) তথা ‘উদ্যোক্তা’ নামক শব্দটির সঙ্গে আজকাল কম-বেশি আমরা সবাই পরিচিত। উদ্যোক্তা বলতে এমন এক ব্যক্তিকেই বোঝায়, যিনি অন্যের অধীনে চাকরির পরিবর্তে নিজেই ছোটখাট কোনো একটি ব্যবসা শুরু করেন এবং সেই ব্যবসাকে ঘিরেই আবর্তিত হয় তার কর্মপরিকল্পনা।
শিক্ষাজীবন শেষে চাকরিই যে শেষ গন্তব্য- এমন চিন্তা-ভাবনার গণ্ডিকে অতিক্রম করে অনেকেই আজ নিজ উদ্যোগে কিছু করতে চাইছেন।
সেই উদ্যোগের শুরুটা হয়তো হচ্ছে খুব স্বল্প পরিসর থেকে। কিন্তু এর পেছনের স্বপ্নটা থাকছে আকাশছোঁয়া। তাই সেই স্বপ্নের গাছটাকে বিশাল বড় করতে তারা রাত-দিন খেটে যান, হাসি মুখে মুখোমুখি হন সকল চাপ, চ্যালেঞ্জ আর ক্লান্তির। আপনিও কি একজন উদ্যোক্তা হতে চান? ছোটখাট ব্যবসার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে নিজের স্বপ্নের গন্তব্যে পৌঁছতে চান? আপনার উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে লেখাটি আপনার জন্য।
উদোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও যে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে:
একা না একসঙ্গে
জীবিকার্জনের জন্য আপনি যে পথটা বেছে নিতে যাচ্ছেন, তা কোনো ১০০ মিটারের রেস না, এটা একটা ম্যারাথন। এখানে উত্থান-পতন, সুসময়-দুঃসময় সহাবস্থান করে। প্রথমেই আপনার দুর্বলতার জায়গাগুলো খুঁজে বের করুন, সেই সঙ্গে বের করুন আপনার শক্তিমত্তার জায়গাগুলোও।
এখানে টিকে থাকতে হলে আপনার দরকার হবে ধৈর্য, অধ্যবসায়, সহিষ্ণুতা। আপনিই ভেবে দেখুন, একা একা কাজ করে, এসব গুণাবলী নিজের মাঝে ধারণ করে নিজের উদ্যোগকে এগিয়ে নেবেন, নাকি পার্টনারশিপে গিয়ে একত্রে এগোবেন।
কোন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবো
এবার নজর দেয়া যাক ব্যবসার দিকে। খুব ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে, বিশ্বস্ত কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, বাজার সম্পর্কে ঠিকমতো অনুসন্ধান করে সিদ্ধান্ত নিন নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে-
- ঠিক কোন ধরনের পণ্য বা সেবা দিতে চাচ্ছেন আপনি?
সমাজে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর মধ্যে ঠিক কোনগুলোকে সমাধান করতে চলেছেন আপনি? অন্যভাবে বললে, কোন শূন্যস্থানটা পূরণ করবে আপনার উদ্যোগ?
আপনার পণ্য বা সেবায় কী এমন আছে যার জন্য একজন ক্রেতা ঠিক আপনার কাছেই আসবে?
আপনার ক্রেতা কারা, কোনো ব্যক্তি নাকি কোনো প্রতিষ্ঠান?
আপনার ক্রেতারা কোথায় থাকেন? তাদের কাছে আপনি কীভাবে পণ্য সরবরাহ করবেন?
এই সবগুলো বিষয় সম্পর্কে ভালো রকমের আইডিয়া নিয়ে এরপরই আপনার মাঠে নামা উচিত। তা নাহলে অর্ধেক পথে গিয়ে কৌশলের পরিবর্তন করতে হলে সমস্যায় পড়বেন আপনি নিজেই।
বিজনেস আইডিয়াটা কি টেকসই?
একবার যখন ব্যবসার ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে পারবেন, এরপর আপনার কাজ হবে এই প্রশ্নের উত্তরটি বের করা। এজন্য আপনাকে মার্কেট অ্যানালাইসিস করতে হবে প্রচুর পরিমাণে। এর মধ্য দিয়েই আপনার পণ্যের ক্রেতা কারা হতে যাচ্ছে, আপনার ব্যবসাটি একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হবে কিনা- এমন বিষয়গুলো বুঝতে পারবেন।
আপনার প্রতিযোগীদের সম্পর্কে ভালোমতো জানাশোনা থাকতে হবে। তাহলে আপনার পণ্য/সেবাটি কোনদিক দিয়ে তাদের থেকে আলাদা হতে যাচ্ছে, যার জন্য একজন ক্রেতা আপনার কাছে আসবেন সেটাও বের করতে পারবেন। এজন্য দরকারে ছোটখাট কিছু পরীক্ষাও চালাতে পারেন আপনার পণ্য নিয়ে।
মার্কেটে ঠিক করুন
খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার পণ্যের একটি নির্দিষ্ট ক্রেতাগোষ্ঠী আছে, যাদের দিকে লক্ষ্য রেখেই আপনি ব্যবসায় নামার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এবার তাহলে এদিকে নজর দেয়া যাক।
ব্যবসার প্রচারণা কীভাবে চালাবেন
জায়গা খুঁজে পাওয়ার পর এবার তাহলে সবাইকে জানানোর পালা, অর্থাৎ আপনার পণ্যের প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। তবে এক্ষেত্রে একটি কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন। আপনি যে পদ্ধতিতেই প্রচারণা চালান না কেন, সেটা দু’টি উদ্দেশ্য অবশ্যই পূরণ করতে হবে- ১) আপনার টার্গেট করা ক্রেতাদের কাছে সেই খবরটা পৌঁছাতে হবে এবং ২) সেই পদ্ধতিটি অবশ্যই আপনার ব্যবসার সঙ্গে মানানসই হতে হবে।
আজকাল প্রচারের জন্য সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের এই যুগে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে কিছুদিন পর পর ক্রেতার সামনে ফিরে আসুন।
আমার ব্যবসাটা চলবে কীভাবে?
ব্যবসাটা শুরু করার জন্য আমার হাতে পর্যাপ্ত টাকা আছে তো? আসলে এ প্রশ্নটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসা শুরুর পর অন্তত এক বছর যেন নিজের হাত খরচ যোগানোর মতো অর্থ আগে থেকেই আপনার হাতে থাকে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রয়োজন একটি সুন্দর ব্যবসায়িক পরিকল্পনা
ধরে নিচ্ছি, এতক্ষণ যাবৎ আপনি নানা ধরনের গবেষণার মাধ্যমে ব্যবসার জগতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন। চমৎকার! এবার তাহলে আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনাটা সুন্দর করে লিখে ফেলুন। এতদিন ধরে যে বিষয়গুলো আপনার মাথায় সারাক্ষণ গিজগিজ করতো, সেগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে লিখতে গেলে আরো নানা ধরনের সমস্যার কথা আপনার মাথায় উঁকি দিয়ে যাবে, বেরিয়ে আসবে নানা সমাধানও।
এই পরিকল্পনাই আপনার ব্যবসার ভবিষ্যত সাফল্য ও ব্যর্থতার মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য গড়ে দিতে সক্ষম।
এবার শুরু...
আসলেই কি আপনি ব্যবসার জগতে নাম লেখাতে যাচ্ছেন? আপনার এতদিনের স্বপ্ন কি তাহলে ছোট পরিসরে শুরু হওয়া উদ্যোগের মধ্য দিয়েই জন্ম নিতে যাচ্ছে?
উদ্যোক্তানামক এই ম্যারাথন দৌড়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত মনে করলে আর দেরি করবেন না, শুরু করে দিন যত দ্রুত সম্ভব...
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন