ইউনিভার্সিটি থেকে এ বছরই গ্রাজুয়েশন শেষ করছে অয়ন। পড়াশোনা শেষ করেই শুরু করতে হবে নতুন একটি জীবন। শেষ কিছুদিন ফাইনাল পরীক্ষা দিতে দিতে অয়ন প্রায়ই ভাবছে খুব জলদি তাকে চাকরি জীবনে প্রবেশ করতে হবো। কিন্তু মনে মনে একটি শংকা কাজ করছে তার মাঝে। ভাবছিল চাকরির জন্য তাকে ইন্টারভিউ বোর্ডের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে তাকে কী প্রশ্ন করা হবে, কীভাবে সেগুলোর উত্তর দিবে এই ভাবনা অয়নের মাঝে চাকরি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরি করছে। সে মনে মনে ভাবছিলো, যদি সে জানতে পারতো ইন্টারভিউ বোর্ডে কী ধরনের প্রশ্ন করা হয় তাহলে পরীক্ষা শেষ করেই সে প্রস্তুতি শুরু করতে পারবে।
যদিও পড়াশোনা বিষয়ক জ্ঞান তার মাঝে যথেষ্ট ছিল, কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে কী ধরনের প্রশ্ন করা হবে এ বিষয়টি নিয়ে অয়ন ছিল চিন্তিত। সে জানে বর্তমান যুগে ইন্টারভিউ বোর্ডে পড়াশুনার বাইরেও অনেক প্রশ্ন করা হয়। আর এই চিন্তাই অয়নের মাঝে ইন্টারভিউ নিয়ে ভীতি তৈরি করছে। অয়ন তাই সিদ্ধান্ত নিলো সে অনুসন্ধানের চেষ্টা করবে সাধারণত ইন্টারভিউ বোর্ডে কী ধরনের প্রশ্ন করা হয়।
চাকরি বা কর্মক্ষেত্রে ইন্টারভিউ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আমাদের প্রত্যেকেরই ইন্টারভিউ নিয়ে থাকে নানান ভীতি। অনেক ক্ষেত্রে আমরা ধারণাও করতে পারি না আসন্ন ইন্টারভিউতে আমাদের কী রকম প্রশ্ন করা হবে। ইন্টারভিউ-এর ভীতি কাটানোর জন্য কোন কোন বিষয়গুলোতে ইন্টারভিউ বোর্ডে সাধারণত প্রশ্ন করা হয় তার একটি সম্যক ধারণা থাকা আমাদের সকলেরই উচিত।
ইন্টারভিউ বোর্ডে করা কিছু সাধারণ প্রশ্ন সম্পর্কে যদি আপনি আগে থেকেই ধারণা নিয়ে যেতে পারেন তাহলে বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার সাহস আপনার মাঝে এমনিই আসবে। আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, যে বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন সে বিষয়ের সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তর মাথায় রাখতে হবে এছাড়াও কিন্তু যারা আপনার ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তারা যেহেতু অনেক অভিজ্ঞ সেহেতু আপনার আর আমার মতো এই সাধারণ ব্যাপারগুলো তাদের আগের থেকে জানা থাকে।
ইন্টারভিউ বোর্ডে সাধারণত দুই ধরণের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। প্রথমত আপনার পারদর্শিতা মূলক প্রশ্ন দ্বিতীয়ত আপনার চারিত্রিক মূলক কিছু প্রশ্ন। পারদর্শিতা মূলক প্রশ্নগুলোর মাঝে থাকে আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা, ক্ষমতা,কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ এসব নিয়ে। চারিত্রিক প্রশ্নগুলোর মাঝে থাকে সহজাত মূল্যবোধ এবং আপনার ব্যক্তিত্ব নিয়ে কিছু প্রশ্ন। Cue Ball Group এর বিজনেস কনসালটেন্ট এবং CEO Anthony Tjan বলেছেন, দুই শ্রেণীর প্রশ্নই ইন্টারভিউ এর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমরা শুধুমাত্র পারদর্শিতার দিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি অপরদিকে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আত্মজ্ঞান, সততা এসবকে এড়িয়ে যাচ্ছি, অথচ ইন্টারভিউ বোর্ডে গুরুত্ব সহকারে এসবদিকগুলোকেও বিবেচনা করা হয়।
যেকোন সংস্থার জন্যই চারিত্রিক প্রশ্নগুলো এবং পারদর্শিতামূলক প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জেনে নিতে পারেনন ইন্টারভিউ বোর্ডে করা পাঁচটি প্রশ্ন যা আপনার স্বপ্নের রাস্তায় হাটার পথকে করতে পারে সহজ।
১. নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন?
এই প্রশ্নটি ছুড়ে দেওয়ার পেছনের কারণ কিন্তু যারা আপনার ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তারা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাওয়ার জন্য করেন নি। তারা অবশ্যই জানতে চাচ্ছে না আপনার শখ কি? পরিবারে কে, কে আছেন? বা আপনি খেলাধূলা পছন্দ করেন কিনা? এসব ব্যক্তিগত বিষয় জানতে চাওয়া তাদের মূল উদ্দেশ্য না। তারা জানতে চাচ্ছে কোন কোন অর্জনগুলো বা কোন কোন কাজগুলো আপনার পরিচয় বহন করছে। আপনি কিভাবে তাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এসব। পরবর্তীতে ইন্টারভিউ বোর্ডে কখনো এরকম প্রশ্নের সম্মুখীন হলে নিজের কাজ এবং অর্জনের জায়গাগুলো সম্পর্কে জানাবেন। নিজের তথ্য দিয়ে উচ্চপদস্থ কাউকে বিরক্ত করবেন না।
২. আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কী?
এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে বেশীরভাগ মানুষ নিজেকে প্রমাণিত করতে গিয়ে বলে, আমি অনেক পরিশ্রমী, আমি ভালো কাজ পারি ইত্যাদি। কখনোই ইন্টারভিউ বোর্ডে এধরণের উত্তর দিবেন না। তাই বলে এরকম ও উত্তর দিবেন না যে পরিবর্তণীয় পরিস্থিতির সাথে তাল মেলাতে পারেন না বা সবার সাথে মিশতে পারেন না। দুর্বলতা আমাদের সবাইরই আছে কিন্তু সবচেয়ে উত্তম পন্থা হচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্যই আপনার দুর্বলতার কথা উল্ল্যেখ করুন, তবে এরকম দুর্বলতা যা আপনার চাকুরীটা করার ক্ষেত্রে যোগ্যতামূলক প্রশ্ন তুলবে না। অথবা এমন একটি দক্ষতার কথা বলুন যা আপনার, মাঝে নেই কিন্তু আপনি শিখছেন।
৩. আগের চাকরী টা কেনো ছাড়তে চাচ্ছেন?
এরকম প্রশ্নের উত্তরে ভুলেও আপনার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের ব্যপারে এমন কিছু না যা কিনা সে, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেয়। প্রতিষ্ঠানের যত ভালো দিক আছে বলুন, বসের প্রশংসা করুন সেই সাথে আপনি জানান নতুন আরো অনেক কিছু শেখার জন্য আপনি তাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করতে চান অথবা নতুন আরো অভিজ্ঞতা অর্জণ করতে চান। পূর্বের চাকরীর ব্যপারে নেতিবাচক কথা বলা থেকে দূরে থাকুন।
৪. পাচ বছর পর নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?
প্রশ্নটি খুব অদ্ভুত শোনালেও চতুরতার সাথেই দিতে হবে উত্তর। পাঁচ বছর আপনি কাজ করবেন কিনা সেটার নিশ্চয়তা নেই, প্রতিষ্ঠান কোন অবস্থানে যা তাও জানা নেই তবুও এই উত্তরটি আপনাকে দিতে হবে। এই প্রশ্নটির উত্তরের জন্য এমন কোন ব্যক্তিত্বের কথা উল্ল্যেখ করতে পারেন যার এই প্রতিষ্ঠানের সফলতায় অনেক অবদান ছিলো, চাইলে প্রশ্নটি ইন্টারভিউ বোর্ডের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারেন, তাদের কী পরিকল্পনা আগামী পাঁচ বছর নিয়ে। তারা যা বলবেন তা থেকে ধারণা নিয়েও বলতে পারেন পাঁচ বছর পর আপনি এরকমভাবে নিজেকে দেখতে চান।
৫. আপনার জীবনের একটি ব্যর্থতার ঘটনা বলুন?
এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে বলে বসবেন না আপনার জীবনে আপনি কখনোই ব্যর্থতার সম্মুখীন হন নি বা কোন খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে আপনি যান নি। আমাদের সবার জীবনেই ব্যর্থতা রয়েছে। তবে ব্যক্তি ব্যর্থতার কথা না বলে কাজের সম্পৃক্ত ব্যর্থতার কথা বলুন যেখানে সফল হবার জন্য আপনি আশাবাদী ছিলেন।
ইন্টারভিউয়ার আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইবে ব্যর্থতার জন্য আপনি কিভাবে দায়গুলো নিজের মধ্যে নিচ্ছেন, কিভাবে নিজেকে শুধরিয়েছেন, আর ভুলগুলো যাতে না হয় সে জন্য কিভাবে নিজেকে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন। আমরা কেউ ই শতভাগ নির্ভুল না কিন্তু ভুলগুলোর ক্ষেত্রে সহজ স্বীকারোক্তি হবে আপনার সফলতার দিকে আগানোর একটি মাইলফলক।
ভবিষ্যত চাকুরীর জন্য নিজেকে গড়ে তুলুন সততা দিয়ে। পারদর্শিতার জায়গায় নিজেকে আরো শক্তিশালী করব তুলুন। তাহলেই স্বপ্নের রাস্তায় হাঁটার আগের পরীক্ষাগুলো হবে আপনার জন্য সহজ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন