প্রকৃতি কত রুপ, কত রঙের পরশা সাজিয়ে বসে আছে সেটা একমাত্র ভ্রমণে বেরিয়েই উপলব্ধি করতে পারবেন। দার্জিলিং গেলেন আর কালিংপং ঘুরলেন না, পাইন ভিউ ক্যাকটাস নার্সারি দেখলেন না, ব্যাপারটা অনেকটা মামা বাড়ি গেলেন কিন্ত আম কাঁঠাল নে খেয়েই বাড়ি ফেরার মত। আপনি যদি গিয়ে থাকেন তাহলে মিলিয়ে নিন আর না গিয়ে থাকলে চলুন আমার সাথেই ঘুরে দেখি এশিয়ার সর্ববৃহৎ ক্যাকটাস নার্সারি যেটার নাম "পাইন ভিউ নার্সারি"।
শখের বসে সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ৪০০০ ফুট উপরে মোহন এস প্রধান নামে একজনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই নার্সারির খ্যাতি এখন এশিয়ার গন্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্বের দরবারে। এর সৌন্দর্য আপনাকে এমন ভাবে মুগ্ধ করবে, হারিয়ে যাবেন এক মায়ার জগতে, চারপাশের পরিবেশ আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য ভুবনে, ভাবতে থাকবেন পৃথিবীতে এত প্রজাতির ক্যাকটাস থাকা কিভাবে সম্ভব?
'ক্যাকটাস’ শব্দটা শোনার সাথে সাথেই আপনার মাথায় যে স্মৃতিটা প্রথমে আসে সেটা হল, কাঁটাযুক্ত একটা গাছ যেটা যেটা গ্রামে রাস্তার পাশেই হয়, আশেপাশের বাসার টবে লাগানো থাকত আর সুযোগ পেলেই আপনি সেই গাছের শরীর থেকে কাঁটা টান দিয়ে অন্য কাউকে ফুটিয়ে দিয়েছেন এমনটাও বিরল নয় কিন্তু। অনেকেরই হয়ত ছোটবেলার এরকম স্মৃতি থাকতেই পারে। ক্যাকটাস এর একটা মাত্র প্রজাতির কথা আমি আগে শুনেছি আর সেটা হল ‘ফণীমনসা’। কিন্তু এত প্রজাতির ক্যাকটাস আমার মত পিউর মানবিকের ছাত্রের জানার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
পৃথিবীতে প্রায় ১৭৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস পাওয়া যায় এবং সবচেয়ে আশ্চর্যজনক কথা হল এই পাইন ভিউ নার্সারি তে আপনি প্রায় ১৫০০ প্রজাতির ক্যাকটাস দেখতে পাবেন, তবে আমি কয়েক শ প্রজাতির কথা মনে করতে পারি। এখানে দেখতে পাওয়া ক্যাকটাস গুলোকে এভাবে বর্ণনা করলে খারাপ হয় না যে, কোনটা আপনার কাছে লিলিপুট আবার কোনটার কাছে আপনি নিজেই লিলিপুট।
সারা পৃথিবীতে ক্যাকটাস সৌন্দর্য এবং প্রয়োজনীয় উদ্ভিদ হিসেবেই পরিচিত। শুধু আমেরিকাই কম করে হলেও ৫০ টি দেশ থেকে ৭ মিলিয়নের বেশি ক্যাকটাস আমদানি করে, বিভিন্ন ঔষধ থেকে হুইস্কি তৈরিতে ক্যকটাসের রসালো ফলের ব্যপক চাহিদা রয়েছে পৃথিবীতে।
এই পাইন ভিউ এর এরিয়া কিন্তু বিশাল নয় যায়গাটা মোটামুটি ছোট হলেও ক্যাকটাস এর প্রজাতির কমতি নেই এখানে তাই অসংখ্য ক্যকটাস দেখার পাশাপাশি আপনি নানা রকম ক্যকটাসের ফুল দেখতে পারবেন যে গুলো আসলেই সুন্দর, না শুধু সুন্দর শব্দ দিলে কম হয়ে যেয় বড়ই 'মচৎকার'। আর আরো বেশি ভালো লাগবে এর পাশের খাড়া ঢাল বেয়ে নিচে নামা আর দূরের পাহাড়ে ঢালে ঘরবাড়ি....
যাতায়াত:
দার্জিলিং থেকে কালিংপং গিয়ে দিনে ফিরে আশার মধ্যে যে কয়টি কয়টি স্পট দেখা যায় এটি তার অন্যতম, রাস্তার পাশেই নার্সারি টি মাথাপিছু ২০ রুপি গুনতে হবে আপনাকে, ছবি তুলতে পারবেন কিন্তু হাত দিতে পারবেন না। ভাড়া সময়ের উপর নির্ভর করে আরর কত জন যাবেন তার উপর, যেহেতু জীপ ভাড়া নিয়ে যেতে হয়, জীপ প্রতি আমাদের ৩৫০০/৪০০০ টাকা লেগেছিলো সারাদিন ঘোরার জন্য এর মধ্যে লামাহাত্তা পার্ক, পাইন ভিউ নার্সারি, তিস্তা লাভার ভিউ পয়েন্ট, কি একটা মন্দির, প্যারাগ্লাইডিং পয়েন্ট সহ আরো বেশ কয়েকটা যায়গা ছিলো।
একটা মজার ঘটনা দিয়ে শেষ করতে চাই আমি, আমার মামা মাহবুব এবং রবিউল ভাই তিন জন একসাথে ছিলাম, এখন মামা ক্যকটাসের সাথে ছবি তুলতে গিয়ে পোজ নিতে গিয়ে পায়ে ক্যাকটাস ফুটিয়ে ফেলে এবং একটু জালা শুরু করতেই আমরা বলি যে এই গাছে পয়জন থাকে, এবং পরে সারাপথ বেচারা পয়জনের ভয়ে পা চুলকিয়েছে আসলেই কিছু হয় না, তবে এর কাটা ফুটবে বের করা চাট্টিখানি কথা নয়।
আপনার দ্বারা পরিবেশের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন, শুভ হোক আপনার ভ্রমণ।
মো. জাকির হোসেন রাজু: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভ্রমন বিষয়ক লেখক ও পেশাদার সমাজকর্মী
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন