অপহরণকারীর সংখ্যা ছিল ১১ জন। তাদের ১০ জনের হাতেই অস্ত্র ছিল। রাঙামাটির কুতুকছড়ি থেকে অপহরণকারীরা প্রথমে নিয়ে যায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে নানিয়ারচর উপজেলায়। বেশির ভাগ পথ হেঁটেই গেছেন, বাকি চার-পাঁচ কিলোমিটার নৌকায়। অপহরণকারীরা কখনো চোখ বাঁধেনি। ব্যবহারও ভালো করেছে। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়নি। তবে বারবার জায়গা বদল করার জন্য পাহাড়ি পথে বনের ভেতর দিয়ে দিনরাত হাঁটতে হয়েছে। অপহরণের ৩২ দিন পর ছাড়া পাওয়া হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমা কথা শুরু করলেন এভাবেই।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি শহরের তেঁতুলতলা এলাকায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রীকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। অন্যজন হলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা। পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
গত ১৮ মার্চ রাঙামাটির কুতুকছড়ি এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে। সেদিন তাঁরা যে বাড়িতে ছিলেন, সেটিও পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের শুকনাছড়ি গ্রামে কথা হয় দয়াসোনা চাকমার সঙ্গে। এ সময় তাঁর মা কালিন্দী চাকমাসহ আরও কয়েকজন স্বজন ছিলেন। শুকনাছড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে হাজাছড়ি গ্রামে দয়াসোনার বাড়ি। অপহরণকারীরা ছেড়ে দেওয়ার পর খাগড়াছড়ি শহর থেকে গতকাল দুপুরে শুকনাছড়ি গ্রামে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠেন দয়াসোনা। নিজের গ্রামে ফিরে যাওয়ার আগে প্রথম আলোর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন তিনি।
দয়াসোনা চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণের পর কুতুকছড়ি থেকে পাহাড়ি পথে হেঁটে এবং নৌকায় করে তাঁদের প্রথমে নানিয়ারচর উপজেলা সদরের কাছাকাছি কোনো এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কাপ্তাই হ্রদে ছোট্ট একটি দ্বীপের ঘরে তাঁদের রাখা হয়। প্রথম দিন ভীষণ ভয়ে থাকলেও পরে ভয় কেটে যায়। দ্বীপের ঘরে দুদিন থাকার পর ট্রলারে করে একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। ট্রলার থেকে নামার পর অটোরিকশায় করে কিছুটা পথ যান তাঁরা। সঙ্গে ছিল অস্ত্রধারীরা। অটোরিকশা থেকে নেমে প্রায় আড়াই ঘণ্টা হেঁটে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির দুর্গম গ্রামে পৌঁছান তারা। অপহরণকারীদের কথা শুনে এলাকার নাম বুঝতে পারতেন তাঁরা। মহালছড়িতে পৌঁছার পর আগের অপহরণকারী দল চলে যায়। তাদের জায়গায় অস্ত্রধারী অন্য দল আসে। মহালছড়ির একটি বাড়িতে এক রাত কাটানোর পর টানা দুই দিন দুই রাত বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে দীঘিনালার মেরুং এলাকায় নিয়ে তাঁদের রাখা হয়। সেখানে বিভিন্ন বাড়িতে তাঁদের রাখা হতো। এক বাড়িতে দু-তিন দিনের বেশি রাখা হতো না। যেসব বাড়িতে রাখা হতো, সেখানে অপহরণকারী দলের সদস্য ছাড়া অন্য কেউ থাকত না। আবার অপহরণকারী দলের সদস্যরাও বদল হতো। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করত অপহরণকারীরা।
দয়াসোনা অভিযোগ করেন, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক তাঁদের অপহরণ করেছে। পরে তাদের সঙ্গে জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) কর্মীরা যোগ দেয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন