ক্যাসিনো ইতালিয়ান শব্দ। ১৬৩৮ সালে ইতালির ভেনিসে সর্বপ্রথম জুয়ার মাধ্যমে ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু হয়। ক্যাসিনো বলতে এমন স্থানকে বোঝায় যেখানে মদ, জুয়া, নাচ, গান ও যৌনতার সংমিশ্রণে বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকে। ক্যাসিনো মূলত পশ্চিমা সংস্কৃতি; যা ইসলামী সংস্কৃতি এমনকি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি পরিপন্থী। আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকার বুকে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র ক্যাসিনোর আড়ালে মদ, জুয়া ও যৌনতার মাধ্যমে যুবসমাজকে ধ্বংস করছে। মানবসমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য ইসলাম বহু আগেই মদ ও জুয়া হারাম করেছে।
আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্যনির্ধারক শরগুলো শয়তানের কাজ ছাড়া কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন কি নিবৃত্ত হবে?’ সূরা মায়েদাহ, আয়াত ৯০-৯১। কোরআনে মদ ও জুয়াকে ঘৃণ্য বস্তু এবং শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। একটি সমাজে যখন মদ ও জুয়ার প্রভাব বেড়ে যায় তখন সেই সমাজের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা, হিংসা, বিদ্বেষ ও অস্থিরতা বেড়ে যায়। আরবি ভাষায় জুয়াকে বলে মাইসির। বাংলায় এর প্রতিশব্দ হচ্ছে জুয়া। ইসলামী পরিভাষায় জুয়া হচ্ছে, ‘উভয় পক্ষ থেকে সম্পদের মালিকানা ঝুঁকির মাঝে ঝুলন্ত রাখা।’ যে মালিক হবে সে পূর্ণ মালিক হবে, আর যে বঞ্চিত হবে সে পুরোপুরি বঞ্চিত হবে। জুয়ার নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হচ্ছে। যেমন লটারি, হাউজি, বাজিতে ফ্লাশ, পাশা, তাস, চাক্কি ঘোরানো, রিং নিক্ষেপ ইত্যাদি।
ক্রিকেট, ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় যে বাজি ধরা হয় তাও জুয়ার অন্তর্গত। কারণ এতেও এক পক্ষ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জুয়া খেলা, বাজি বা লটারি ধরার প্রবণতা আমাদের দেশে মহামারী রূপ নিয়েছে। জুয়া সামাজিক, পারিবারিক, আর্থিক ও নৈতিক সংকট তৈরি করে এবং মানুষকে বহুবিধ ক্ষতির সম্মুখীন করে। জুয়া খেলা মানুষের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। জুয়ার ব্যয় নির্বাহের জন্য নানা ধরনের অপকর্মের আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। জুয়াড়িরা অনেক সময় নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের বাজি ধরে জুয়া খেলে। তাই ইসলাম সব ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ করেছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মদ, জুয়া ও বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন।’ বায়হাকি। জুয়ায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়াড়ি, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে যাবে না।’ দারেমি।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন