করোনা মোকাবেলায় দেশ গড়ার দীক্ষা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ইয়াং বাংলা নেটওয়ার্ক। ইয়াং বাংলার জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করা সংগঠনগুলো এবং ইয়াং বাংলা নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত তরুণদের আরো বেশ কিছু সংগঠন দেশ জুড়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সেবা মূলক কার্যক্রম। করোনার এই মহামারীর মাঝেও দেশের প্রতিটি জেলায় অসহায়, দুস্থ ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে থাকার অঙ্গীকার পূরণ করছে তারা।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয় উপদেষ্টা এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করা ইয়াং বাংলা। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এই ইয়াং বাংলা চেষ্টা করেছে দেশ গঠনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়া তরুণদের খুঁজে বের করতে এবং তাদের এই গঠনমূলক কাজের জন্য পুরস্কৃত করতে। সেই লক্ষ্য নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে প্রদান করা হচ্ছে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড। বিগত বছরগুলোতে তরুণদের ৯০ সংগঠনকে পুরস্কৃত করেছে ইয়াং বাংলা, যাদের কাজ মুগ্ধ করেছে আন্তর্জাতিক বেশ কিছু সংগঠনকেও। এই জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের হাত ধরেই শুরু হয়েছে ইয়াং বাংলার 'কোভিড-১৯' ভাইরাসকে পরাজিত করার নতুন যুদ্ধ। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা তরুণদের এই সংগঠনগুলো এবারও গ্রহণ করেছে ভিন্নধর্মী ও মুগ্ধ করা বেশ কিছু কার্যক্রম।
জলে ভাসা মান্তা সম্প্রদায় সব চাইতে অবহেলিত জনগোষ্ঠী। এদের বাড়ি নেই, ঘর নেই। আজন্ম নৌকাতেই বাস। নদীই এদের জীবন। করোনা ভাইরাসের ( কোভিড-১৯) বিরূপ প্রভাবে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম বিপদে পড়ে জলে ভাসা মান্তারা। বেকার সময় কাটছে মান্তা পরিবারের সব সদস্যদের। কর্মহীন মান্তাদের ঘরের চুলো আর জ্বলছে না। এমন এক সময় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বরিশালের জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী সংগঠন ইয়ুথনেট (YouthNet)। বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্ট ও ইয়ুথনেট বরিশালের লাহারহাটের এই অসহায় মানুষগুলোর কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বৈশাখী ভালোবাসার উপহার।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শুরু থেকেই হবিগঞ্জ জেলায় বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছে ২০১৮ সালের জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড এর ফাইনালিস্ট 'রিলেশন টু পিউপিল'। সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা গুরুত্বপূর্ণ সকল সড়কে চলমান যানবাহনে জীবাণুনাশক স্প্রে করে যাচ্ছে। ১মিটার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সকল ফার্মেসি ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানে এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে রঙ দিয়ে 'সুরক্ষা রেখা' অঙ্কন করে দিয়েছে।
এছাড়াও লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের মধ্যে নিয়মিত খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন গ্রামে ২শতাধিক পরিবারের মধ্যে তারা তাদের উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে এবং এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
করোনা ভয়াবহতা মোকাবেলায় মানিকগঞ্জের জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সংগঠন 'শিক্ষার আলো পাঠশালা' এলাকায় পরিবারগুলোর ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে তাদের দৈনন্দিন বাজার করে দেয়া, বাড়ী বাড়ী গিয়ে জীবাণু নাশক স্প্রে করা, এলাকার রিকশাগুলোতে করোনা মোকাবেলার জন্য স্প্রে দেয়া এবং প্রতিটি রিকশায় একটি করে স্প্রে বোতল বেঁধে দেয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংগঠনটি। যে জীবাণুনাশক লাগছে তা তাদের সংগঠনের অফিস থেকে প্রদান করা হচ্ছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সানি রহমান মিন্টু জানান, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই দুর্যোগ মোকাবেলা করবো।
‘কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানকে সামনে রেখে জেলার অনেক পতিত ও আবাদি জমিতে কৃষি কাজের জন্য বীজ ও সার পৌঁছে দেয়ার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে খুলনার 'অনুশীলন মজার স্কুল' সংগঠনটি। করোনা পরবর্তী কৃষিতে চাপ মোকাবেলায় এখনই প্রস্তুত হচ্ছে তারা, তাদের 'আঙ্গিনায় কৃষি' উদ্যোগের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে এই সংগঠনটি।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে গাইবান্ধার Students Organisation of Youth Power (SOYP)। সংগঠনটির উদ্যোগে সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জনসাধারণের হাত ধোঁয়ার জন্য কয়েকটি জার স্থাপন করা হয়। পরে গ্রামের মানুষদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লিফলেট বিতরণ করা হয়।
'বায়ান্ন' সংগঠনটির চিন্তাভাবনা একটু ব্যতিক্রম! ১০০, ২০০ মানুষকে ৩-৪ দিনের খাবার প্রদান করা হলে দেখা যায় আমাদের দেয়া জিনিসগুলো দিয়ে তারা কিছুদিন ঘরে থাকে এরপর আবার ঠিকই ঘর থেকে বেড়িয়ে আসবে! ৩-৪ দিনে আপনি কখনো ভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে আনতে অবদান রাখতে পারবেন না। তাই ২০১৮ সালের জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী বায়ান্ন উদ্যোগ নিয়েছে পরিবার কমিয়ে এবং পরিমাণ বাড়িয়ে অন্তত একমাসের জন্য কিছু পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়ার। আর এই লক্ষ্য নিয়ে এরই মধ্যে বেশ কিছু পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছে তারা। সামনে আরো কিছু পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনটির।
'বরিশাল ইয়ুথ সোসাইটি' তাদের সচেতনতা মূলক কার্যক্রম এবং জরুরি কাউন্সিলিং সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন অনলাইনের মাধ্যমে। করোনার প্রস্তুতি নিয়ে বরিশালের বর্তমান অবস্থা এবং অন্যান্য জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে সংগঠনটির ফেসবুক পেজে গিয়ে যোগাযোগ করলে তারা আপনার প্রশ্নের উত্তর প্রদান করবে।
করোনা ভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি। কিন্তু তাই বলে কী বন্ধ থাকবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সহায়তা কার্যক্রম? মোটেও নয়। আর সে কারণেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সেবা দিতে বৃহস্পতিবার থেকে অনলাইন হেল্প চালু করেছে ‘সিলেট আর্ট এন্ড অটিজম ফাউন্ডেশন’ এবং ‘সিলেট আর্ট এন্ড অটিস্টিক স্কুল’। সিলেট আর্ট এন্ড অটিস্টিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস শুরু করেন তারা।
'স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন' চট্টগ্রাম এ রাঙামাটি এলাকায় শিশুদের জন্য সরবরাহ করছে দুধ। চারিদিকে লকডাউনের কারণে অনেক বাবা-মা তার সন্তানের জন্য সঠিক সময়ে দুধ সরবরাহ করতে পারছেন না। আর সে কারণে পুষ্টির অভাবে ভোগার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে এ সকল শিশুদের। সংগঠনটির পক্ষ থেকে একটি হেল্প লাইনের মাধ্যমে দুধ কিনতে পারছেন না বা দুধ কেনার সামর্থ্য নেই এমন বাবা-মার কাছে দুধ পৌঁছে দিচ্ছে সংগঠনটি।
'ইচ্ছা পূরণ সামাজিক সংগঠন' সিলেটের উদ্যোগে দ্বিতীয় ধাপে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ সম্পূর্ণ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে রুমা আক্তার জানান, আমাদের ফান্ড খুবই ছোট। তাই প্রথম ধাপে আমরা ২০ পরিবারকে এবং দ্বিতীয় ধাপে ১০ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। ফান্ডের ওপর ভিত্তি করে এই কার্যক্রম আরো বাড়ানো হবে বলে জানায় সংগঠনটি। সূত্র- ইত্তেফাক
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন