মো. উজ্জল তালুকদার
পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা আবশ্যক বিষয়। এসব মৌলিক চাহিদা ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। জন্মের পর থেকেই আমাদের এসব চাহিদা পরিবার মেটানোর চেষ্টা করে। এখন পরিবারের দায়িত্ব কমেছে, আমাদের দায়িত্ব বেড়েছে। ভালোবাসা, ত্যাগ বা ঋণ পরিশোধের দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানো দায়িত্বও আমাদের। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এ দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। আমাদের সে সব মৌলিক চাহিদা পূরণ করার জন্য কিছু না কিছু করতেই হয়। আমরা কোন ধরনের কাজ করব, এ পছন্দটা শুধুই আমাদের। আমাকে দিয়ে কী সম্ভব, কোন কাজে আমার আগ্রহ ও দক্ষতা আছে; আমাকেই ঠিক করতে হবে। আমরা ব্যবসা কিংবা চাকরি করতে পারি। আমাদের কাজ ছোট, মাঝারি বা বড় হতে পারে। তবে আজ অথবা কাল যে কোনো কাজ আমাদের করতেই হবে।
বাংলাদেশে লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী রয়েছেন। প্রতি বছর কয়েক হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগেরই স্বপ্ন একটি ভালো চাকরি। প্রতি বছরই ব্যাংক, বিসিএস ও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হচ্ছে। ফাঁকা পদের সংখ্যার চেয়ে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। এই বাস্তবতায় একটি গল্প বলি।
আমাদের চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার আগে পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে। কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর চাকরির প্রার্থীকে কয়েকটি ধাপের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। প্রতিটি ধাপে কোনো না কোনো প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়। সাধারণত এমসিকিউ পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভা- এ তিনটি ধাপ হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে চাকরির ক্ষেত্রে আরও কিছু ধাপ ও পদ্ধতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেগুলো সম্পর্কেও ধারণা থাকা দরকার। অনেক চাকরিতে আবেদনের পর- ১. প্রাথমিকভাবে প্রার্থী বাছাই করে, ২. বাছাই করা প্রার্থীদের ভাইভা নেয়, ৩. প্রার্থীদের এমসিকিউ পরীক্ষা নেয়, ৪. লিখিত পরীক্ষা নেয়, ৫. অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট নেয়, ৬. ফাইনাল ভাইভা নেয়, ৭. ভেরিফিকেশন করে ও ৮. স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। এ ৮টি ধাপে উত্তীর্ণ হলেই সেই প্রার্থী চাকরি পান। তাই চাকরি পেতে হলে সব ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতি ও যোগ্যতা লাগবে।
বাংলাদেশে অনেক ধরনের চাকরি আছে। কোন ধরনের চাকরি আপনার টার্গেট তার ওপর ভিত্তি করে আপনার প্রস্তুতি পরিকল্পনা সাজাতে হবে। যেমন- বিসিএস প্রস্তুতি আর ব্যাংকের প্রস্তুতি এক রকম হবে না। কারণ, দুটি পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন আলাদা। প্রতি বছর বিসিএসের প্রশ্ন পিএসসি করে থাকে এবং প্রশ্নের ধরন ও নম্বর বণ্টন একই রকম থাকে। কিন্তু ব্যাংকের বা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ, কলা অনুষদ, ব্যবসা অনুষদ, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদ, বুয়েট, বিইউপি কিংবা আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। একেক প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন ও মান বণ্টন আলাদা হয়ে থাকে। কোনো প্রতিষ্ঠান ইংরেজির ওপর, আবার কোনো প্রতিষ্ঠান গণিতের ওপর জোর দিয়ে প্রশ্ন ও মান বণ্টন করে। তাই আপনাকে ইংরেজি ও গণিতের ওপর জোর দিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। কেউ গণিতে দুর্বল হলে সেটিতে ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। কেউ ইংরেজিতে দুর্বল হলে সেটিতেও একই রকম গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনি কোন বছরে চাকরির প্রস্তুতি নেবেন? এ প্রশ্নের উত্তর হলো- আপনি চাকরি পাওয়ার জন্য কতটা যোগ্য। যোগ্য না হলে সেই যোগ্যতা অর্জন করতে কত সময় লাগবে। সে জন্য আপনি বিগত সালের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন দেখতে পারেন। সেখানে ৬০-৭০ শতাংশ নম্বর যদি আপনি পান, তবে নিজেকে যোগ্য ভাবতে পারেন। সেই ৬০-৭০ শতাংশ নম্বর পেতে যতদিন লাগবে ততদিন প্রস্তুতিকাল।
সফলতাই জীবনের সব কিছু নয়। সফলতার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা বা সুখ নিহিত থাকে এমনও নয়। তবে সফলতা আমাদের জীবনকে সহজ করে দেয় এবং সমাজের জন্য অনেক কিছু করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। জীবনে সফিল্য পেতে হলে অনুপ্রেরণা, পরিশ্রম ও পরিকল্পনার সঙ্গে আরও কিছু গুণ থাকতে হয়। যারা সৎ, নিষ্ঠাবান, বিনয়ী, নিরহঙ্কারি তাদের মধ্যেই সাফল্যের হার বেশি। সমাজে নারীকে সম্মান করতে হবে। আমাদের আশপাশে থাকা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে সম্মান করতে হবে। আমরা সবাই একদিন মারা যাব। আমরা অল্প কিছুদিনের জন্য এই পৃথিবীতে এসেছি। মানুষ হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য তা পালন করতে হবে। আলোর পথে, ন্যায়ের পথে, সত্যের পথে থাকতে হবে। খারাপ সংস্কৃতি, অভ্যাস ছাড়তে হবে। অশ্নীলতা, অপবিনোদন এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। জীবনের জন্য বিনোদন। বিনোদনের জন্য জীবন নয়।
মানসিক অশান্তি ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক বর্তমান সময়ে বড় একটি চ্যালেঞ্জ। চাকরির প্রস্তুতিসহ জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এ বিষয় দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বন্ধু বা জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। সর্বোপরি, আপনার জীবন আপনাকেই সাজাতে হবে। আপনি ভালো হবেন, নাকি খারাপ হবেন- সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। যেমন, ইন্টারনেটে আপনি ভালো ও খারাপ উভয় কাজ করতে পারেন। আমাদের আশপাশে পেশার দিক দিয়ে অনেক সফল মানুষ আছে কিন্তু আমাদের জীবন ও পেশা উভয় দিক থেকে সফল মানুষ দরকার। সাফল্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে জীবনটা হারানো যাবে না। কারণ, জীবন একটাই, এ জীবন হারিয়ে গেলে আর পাওয়া যাবে না। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মুহূর্তকে সৎভাবে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের বর্তমানের কর্ম ও পরিশ্রমই আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মফল ও ভবিষ্যৎ জীবন।
মো. উজ্জল তালুকদার
প্রভাষক; গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
Email: ahmedtayabreuzzal@gmail.com
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন