বাংলাদেশে প্রতিবছর যারা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয় তার প্রায় ৬-৮ লক্ষ। এদের যারা উত্তীর্ণ হয় তাদের বেশির ভাগেরই পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তের মধ্যে। বাবা- মা অশিক্ষিত/অল্পশিক্ষিত যাই হোক না কেন সন্তানকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে উচ্চশিক্ষিত করে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননা। স্বপ্ন থাকে সদ্য পাশ করা ছেলে বা মেয়েটি দেশের সর্বোত্তম বিদ্যাপিঠে পড়াশোনা করার। কারণ ততোদিনে সে বুঝে গেছে নামকরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা না করলে ভবিষ্যতে সুন্দর নিশ্চিত একটা ক্যারিয়ার সম্ভব না।
প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা মোট ছাত্রছাত্রীর: মাত্র ৫% থেকে ১০% দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পায়। ১৫% থেকে ২৫% ছাত্রছাত্রীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, বাকি ৬০% থেকে ৭০% ছাত্রছাত্রীর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। সরকারি বা বেসরকারি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়াশোনার মানে ও গুণে যথেষ্ট তারতম্য লক্ষ্যনীয়। এরপরও শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য ভাল কিছু করার। কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনায় এনে অনেকেই পডাশোনাটাকেই ঠিকমত শেষ করতে হিমশিম খেয়ে ওঠে। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে চাকরি খোঁজার চেষ্টা। আর এখানেই সব থেকে বড় বিড়ম্বনাই পড়তে হয় সদ্য পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের বেশির ভাগের। কারণ প্রতি বছর যে হারে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারি বের হয় সে তুলনায় চাকরির সুযোগ আমাদের দেশে নাই। তাছাড়া কারিগরি শিক্ষার যথেষ্ট সুযোগ নাই। যার ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বেকারত্বের গ্লানিতে ভোগে।
এই পরিস্থিতি পিছনে বেশ কিছু কারণ বিদ্যমান যা নিম্ন উল্লেখিত:
১. শিক্ষা জীবনের শুরুতে নিজের সক্ষমতা বিবেচনা না করে দেশের তথাকথিত উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করা। অর্থাৎ সমাজকর্মের ভাষায় Innovation/ সুপ্ত প্রতিভা নিজের ভিতর কি আছে সেটা।
২. শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই ক্যারিয়ার ভাবনা না থাকা।
৩. পারিবারিক অসচ্চলতা ও অসচেতনতা যা কিনা সদ্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করা ছেলে মেয়েদের চাকরির প্রস্তুতির সময়টুকুও দিতে চায়না/ পায়না।
৪. অভিভাবকদের অসচেতনতার সহিত অসহযোগিতা।
৫. ক্যারিয়ার সম্পর্কে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও যেনতেন একটা চাকরিতে প্রবেশ করা
৬. সময় সম্পর্কে অসচেতনতা ও তার সঠিক ব্যবহার না করা।
৭. সফল কোন ব্যক্তির আদর্শ অনুস্রণ না করা।
৮. যথেষ্ঠ কর্মসংস্থানের অভাব থাকা।
৯. বর্তমান সময়ে যুব সমাজের বেশিরভাগ সময় সোস্যাল মিডিয়ায় সময় পার করা।
১০. চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জনবল নিয়োগের মানসিকতা।
১১. প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব দৃশ্যমান।
পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে করনীয়:
১.উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরবর্তী সময়ে নিজের মনস্থির করা এবং সক্ষমতা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা জীবনে প্রবেশ করা। এই যেমন শিক্ষার্থী হিসাবে নিজের পছন্দ ও সামর্থ এবং সে অনুযায়ী সামনে অগ্রসর হওয়া।
২. ইংরেজি দক্ষতা বৃদ্ধি ও যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করা
৩. কারিগরি শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ পূর্বক নিজেকে কর্মোপযোগি করে তোলা।
৪. প্রযুক্তিগত জ্ঞান বৃদ্ধি করা।
৫. সময়কে সময়ের মত করে কাজে লাগানো।
৬. একজন সফল ব্যক্তির আদর্শ অনুসরণ ও পরামর্শ গ্রহণ করা।
৭. চাকরির প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ঠ সময় প্রয়োজন সেটা পরিবার কে বুঝানো এবং পরিবারের সমর্থন আদায় করা।
৮. কোন কাজে ভয় কিংবা হতাশ না হওয়া।
৯. চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হার না মানা।
১০. নিজের স্বপ্ন কে সব সময় বড় করে দেখা।
১১. অন্যকে অনুসরণ মানে অনুকরণ যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।
১২. অপারোগতা অথবা সাকসেস না হওয়া নিজের লজ্জা না ভেবে বরং পুনরায় চেষ্টা করা।
১৩. স্বল্প মেয়াদি অথবা ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তা বিদ্যমান জেনেও সেরকম চাকরিতে প্রবেশ করে সময় নষ্ট না করা।
সবশেষে বলবো আমরা হারের আগেই হেরে যাই, আর এই হারার কাছে হেরে যায় বলেই আমরা জয়ী হতে পারিনা। হারকে জয় করলেই কেবল জয়ী হওয়া যায়।
মো: দিপুল হোসেন (দিপু), সহকারি অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগ, দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন