৫০০০ টাকাতেই রাজার হালে ঘুরে আসুন দার্জিলিং। তবে প্রথমেই বলে নেই এই খরচ কিন্তু ৪-৫ জনের জন্য প্রযোজ্য। আসুন জেনে নেই কিভাবে ৫০০০টাকায় ঘুরে আসবেন দার্জিলিং। পাসপোর্ট ভিসা রেডি করে মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকে ট্রাভেল ট্যাক্স (৫০০ টাকা) জমা দিয়ে দিন তাতে বর্ডারে সময় বাঁচবে আর ঝামেলা কম হবে। এবার যাওয়ার টিকেটের ঝামেলা, তো আপনার নিশ্চয় ৩০-৪০ টাকা আর ২-৩ ঘন্টা সময় নষ্ট করে গাবতলী থেকে টিকেট কিনে নষ্ট করার মতো সময় নাই। কোন ব্যাপার না সহজ.কম থেকে ঢাকা-বুড়িমারীর টিকেট কিনে প্রিন্ট করে নিন। নাবিল আরএম-২ (এসি) বাসের টিকেট পেয়ে যাবেন কাউন্টার থেকে ১০০-৩০০ টাকা কমে।
যাত্রার দিন ভালমতো দেখে নিন পাসপোর্ট ভিসা ট্রাভেল ট্যাক্স আর টিকেট ঠিক মতো আছে কিনা? বেড়িয়ে যান বাসা থেকে। নাবিলের এসি বাস গাবতলী থেকে রাত ৯.৩০ এ ছাড়বে। পানি কিনে টাকার নষ্ট করতে না চাইলেও সমস্যা নেই কারণ বাসেই আপনাকে পানির বোতল দেয়া হবে। রাত ১-১.৩০ এর দিকে ফুড ভিলেজ নামের হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে বাস স্টপেজ দিবে সেখানে খুব ক্ষুধা না থাকলেও ৩৫ টাকায় ভেজিটেবল পেটিস পাওয়া যায় খেয়ে বাসে উঠে পরুন। চোখে একটু ঘুম থাকলে চোখ বন্ধ করুন। চোখ খুলেই দেখবেন বুড়িমারী পৌঁছে গেছেন সকাল ৬-৭ টার দিকে। নামলেই দালাল ধরবে আপনাকে কিন্তু আপনার তো কম টাকায় ট্যুর করতে হবে আমার মতো তো কারো সঙ্গে কথা না বলে বুড়ির হোটেলে গিয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিন। সারারাত তো বাসে বসে ছিলেন তো নাস্তা শেষে হাতে কিছু সময় থাকলে একটু এদিক হাটাহাটি করুন। বর্ডার খুলবে ঠিক ৯.০০ টায়। নিজে নিজেই ইমিগ্রেশন অফিসে চলে যান। কাউন্টার থেকে একটা ডিপার্চার ফরম ফিলআপ করুন। কাউন্টারে আপনাকে ২০ টাকা দিতেই হবে। ফরম ফিলআপ করে ছবি তুলে কাস্টমসের দিকে এগিয়ে যান। কাস্টমসে ট্রাভেল ট্যাক্সের কপি সো করে একটা সিল নিয়ে ঢুকে যান ইন্ডিয়া।
ইন্ডিয়া ঢোকার পরও আপনাকে দালাল ধরবে। এখানের দালালগুলা মোটামুটি ভাল। বাংলাদেশী ১০০ টাকায় আপনার সব কাজ করে দিবে। এখানে দালাল দিয়ে করিয়ে ফেলুন সব ফর্মালিটিজ। আমি একা একাই করেছিলাম কিন্তু কাস্টমসে আর ইমিগ্রেশনে ৫০+৫০ = ১০০ টাকাই লাগে আর সাথে একটু ফাও ঝামেলা। দালালরা এটা ৭০-৮০দিয়ে মনে হয় সেট করে নিজেদের ২০/৩০ কমিশন রাখে। ফর্মালিটিজ শেষে বর্ডারের সঙ্গের মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে রেট যাচাই করে সাথের টাকা/ডলার ক্যাশ করে নিন। আমি ৮১.৫ করে পেয়েছিলাম বাংলাদেশী ১০০ টাকায়। বর্ডারেই সব টাকা ভাঙ্গিয়ে নিন পরে কিছু বাঁচলে আবার ব্যাক করার সময় ক্যাশ করে নিতে পারবেন ১.১৮ টাকা রেটে। শিলিগুড়ি অথবা দার্জিলিং-এ বাংলাদেশি টাকা এক্সচেঞ্জ করা অনেক ঝামেলার কাজ আর রেট খুবই কম বর্ডার থেকে প্রায় ১০-১৫ টাকা করে কম পাবেন।
টাকা ক্যাশ করে এবার শিলিগুড়ি চলে যান। চেংরাবান্ধা বর্ডার থেকেই শেয়ার ট্যাক্সি পাওয়া যায় ভাড়া পড়বে ২০০ রুপির মতো অথবা বর্ডার থেকে অটো রিক্সা নিয়ে চলে যান চেংরাবান্ধা বাইপাস ভাড়া পড়বে ৩০-৪০ রুপি। সেখান থেকে মাথাভাঙ্গা অথবা কুচবিহার থেকে শিলিগুড়ির বাসে মাত্র ৬০ রুপি দিয়ে চলে যেতে পারবেন শিলিগুড়ি। বাসগুলো ভালই আর স্পীড লক্কর-ঝক্কর অ্যাম্বাসেডর থেকে বেশি। ৯টা বাজে বর্ডার ক্রস করলে ১১-১২টার মধ্যেই শিলিগুড়ি পৌঁছে যাবেন। এবার শিলিগুড়ি তেনজিং নরগে বাস টার্মিনালে নেমে পাশের শিলিগুড়ি জংশনে একটু ঢুঁ মারতে পারেন। সাথেই সুন্দর দার্জিলিং হিমালয়ান রেল স্টেশন। একটু পর দুপুরের খাবার শেষ করে এবার ট্রাফিক বক্সের সাথের জীপ স্ট্যান্ড থেকে ১৩০ রুপি দিয়ে দার্জিলিংয়ের শেয়ার জীপের টিকেট নিয়ে জীপে বসে পরুন। পাহাড়ি রাস্তার সৌন্দর্য, মেঘ আর পাহাড়ি গ্রাম দেখতে দেখতে ৩-৩.৩০ ঘণ্টায় চলে যাবেন দার্জিলিং। দার্জিলিং মটর স্ট্যান্ডে নেমে একটু উপরের দিকে গিয়ে রুম নিয়ে নিন। বেশি উপরে হোটেল ঠিক করলে নিচে নামতে কষ্ট লাগবে আর বেশি নিচে নিলে উপরে যেতে কষ্ট লাগবে তাই মাঝামাঝি জায়গায় হোটেল ঠিক করুন। ১২০০-১৫০০ রুপির মধ্যে গিজার সহ ভাল মানের রুম পাবেন। ৪-৫ জন ইজিলি থাকা যাবে আর রুম কক্সবাজারের ৪-৫ হাজার রুমের চাইতে কোন অংশেই কম ভাল না। হোটেল ঠিক করে একটু দার্জিলিংয়ের এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করে মসজিদের পাশে মুসলিম হোটেল আছে সেখানে গরুর মাংস ভুনা আর ভাত খেয়ে নিন। খাওয়া দাওয়া শেষে পরদিন লোকাল টুরিস্ট স্পট ঘুরার জন্য একটা জীপ ঠিক করে নিন ২০০০-২৪০০ রুপির মধ্যে। রুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরুন কারণ জীপ আপনাদের রুম থেকে ডেকে নিয়ে যাবে ভোর ৪টার সময়। মোটামুটি সবগুলা স্পট দেখিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ হোটেলে ছেড়ে যাবে। আমরা ঘুম থেকে উঠতে পারিনি তাই ভোরে টাইগার হিল, বাতাসিয়া লুপ আর ঘুম মন্সট্রি মিস করেছিলাম।
পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিন। ভোর ৪টায় জীপে করে টাইগার হিল বাতাসিয়া লুপ আর ঘুম ঘুরে জীপ আপনাদের ৮টার দিকে হোটেলে দিয়ে যাবে নাস্তা করার জন্য। নাস্তা শেষে আবার জীপে গিয়ে বসুন আর একে একে হিমালয়ান মাউন্টেনারিং ইন্সটিটউট, মিউজিয়াম, চিড়িয়াখানা, তেনজিং রক, জাপানিস টেম্পল, পিস প্যাগোডা, টি-গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন আর রক গার্ডেন ঘুরে দেখুন। এইচএমআই তে ঢোকার জন্য আপনাকে টিকেট কিনতে হবে। ইন্ডিয়ানদের জন্য ৫০ রুপি আর বিদেশিদের জন্য ১০০ রুপি সঙ্গে ক্যামেরার জন্য অতিরিক্ত ১০ রুপি।
আমরা যেহেতু ইন্ডিয়ানদের ভাই তো ৫০ রুপি দিয়েই টিকেট নিয়ে নিন। ওরা বুঝতে পারবে না আপনি কোন দেশের। তেনজিং রকে ৫০ রুপি দিয়ে রক ক্লাইম্ব করতে পারবেন আর রক গার্ডেন ঢুকতে আপনাকে ১০ রুপি দিয়ে টিকেট কিনতে হবে। রক গার্ডেন থেকে ব্যাক করার সময় অরেঞ্জভ্যালি টি স্টেটে একটু নেমে সময় কাটাতে পারেন। দার্জিলিং স্টেশনেও এক কাপ চা খেয়ে নিতে পারেন। এদিন ক্যাবল কারে উঠার কোন দরকার নেই বলে আমার মনে হয় কারণ ক্যাবল কারে চড়তে গেলে আপনাকে লাইন আর রাইডসহ ৩-৪ ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হবে তাতে আপনি অন্য জায়গা গুলো শান্তিমতো ঘুরতে পারবেন না। সন্ধ্যায় হোটেলে ব্যাক করে দার্জিলিংয়ে পায়ে হেটে ঘোরাঘুরি করুন। জায়গায় জায়গায় রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেখানে গিয়ে লোকাল ফুড ট্রাই করতে পারেন। মমো আর থুপকা (স্যুপি নুডুলস টাইপ) অসাধারণ।রাতে মুসলিম হোটেলে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। একটু দেরী হলেও সমস্যা নেই কারণ কালকে আপনার তেমন কোন কাজ নেই
সকাল ৮-৯টায় ঘুম থেকে উঠুন। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা শেষ করে বেড়িয়ে পরুন। গতকাল তো ক্যাবল কারে উঠতে পারেন নি। নিচে মটর স্ট্যান্ড থেকে লোকাল জীপে ১০ রুপি করে চলে যান সেন্ট জোসেফ স্কুলের সামনে। এখান থেকে ঠিক বিপরীতে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠলেই ক্যাবল কার। ১৭৫ রুপি দিয়ে টিকেট কিনে লাইনে দাড়িয়ে যান। লাইন শেষে ক্যাবলকারে চড়ে বসুন। ক্যাবল কার থামলে নেমে আবার লাইনে দাড়াতে হবে। সেখান থেকে আবার একটু পর ক্যাবল কারে চড়ে আগের জায়গায় রাইড শেষ হবে। আবার আগের মতো লোকাল জীপে চলে যান দার্জিলিং মটর স্ট্যান্ড। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। বিকেলে বিগবাজার অথবা লোকাল মার্কেট থেকে শপিং করার থাকলে করে নিন। সন্ধ্যায় আইনক্সে একটা মুভি দেখতে ভুলবেন না। বিগবাজারের বিল্ডিংয়েই আইনক্স। টিকেট মাত্র ৭০রুপি। ব্লগবাস্টার থেকেও বক্স অফিসটা জোস। মুভি দেখা শেষ করে রাতের খাবার খেয়ে নিন। রুমে ফেরত চলে যান। আপাততো আপনার দার্জিলিং ঘোরা শেষ। এবার চাইলে ব্যাগ প্যাক করে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন কালকে সকালে ব্যাক করার জন্য। অথবা একটা দিন ঘুমিয়েও কাটাতে পারেন চাইলে।
ব্যাক করার সময় দার্জিলিং থেকে লোকাল শেয়ার জীপে করে মিরিক চলে যেতে পারেন। সেখান থেকে শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি থেকে বাসে করে চেংরাবান্ধা বাইপাস তারপর চেংরাবান্ধা বর্ডার। ট্যুর শেষে রুপি থাকলে বর্ডারে আবার টাকায় চেঞ্জ করে নিন। বর্ডারে কাউকে ১০০ টাকা দিলে সেই সব ফর্মালিটি শেষ করে আপনাকে গেট অবধি ছেড়ে দিয়ে আসবে। বাংলাদেশ ঢুকে টুকটাক ঝামেলা করতে না চাইলে কোন দালালের সহায়তা নিন। কোন ঝামেলা ছাড়াই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে কয়েক মিনিটের মধ্যেই। কিন্তু টাকা দিতে হবে ২০০। বেশি দাবি করবে কিন্তু দিবেন না। সময় থাকলে বুড়ির হোটেলে খেয়ে নিন নয়তো কিছু খাবার কিনে বাসে উঠে বসুন। বর্ডারেই অনেক বাস কাউন্টার আছে। সবগুলো বাস ৬.১০-৬.৩০ এর মধ্যেই ছেড়ে দেয়।
টিকেটের জন্য দালাল ধরতে পারে আপনাকে কিন্তু একাই যাবেন টিকেট কাউন্টারে। এখানে দালাল আপনার থেকে টাকা নিবে না কিন্তু কাউন্টার আপনার থেকে টিকেটের দাম ২০-৫০ টাকা বেশি নিয়ে দালালকে কমিশন দেবে। রাতে বাস থামলে, রাতের খাবার সেরে নিতে পারেন। সকাল সকাল ঢাকা নেমে যান আর বাসায় গিয়ে হিসাব করুন শপিং ছাড়া কত টাকা খরচ হলো।
** টাকায় রেট ভালো পাওয়া যায় ডলার থেকে। কিন্তু বর্ডারে ৫০০০ টাকার বেশি আছে বললে ঝামেলা করবে। তাই কয়েক জায়গায় টাকা ভাগ করে রেখে একসাথে ৪-৫ হাজার টাকা রাখাই ভাল। জিজ্ঞেস করলে ৪-৫ হাজার টাকা আছে বলবেন।
** বর্ডার ইন্ডিয়ান টাইম সন্ধ্যা ৬.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। (শিলিগুড়িতে সচরাচর শেয়ার ট্যাক্সি পাওয়া যায় না। দালালরা বর্ডার বন্ধ হয়ে যাবে, রাস্তায় জ্যাম, গাড়ী নাই বলে রিজার্ভ ট্যাক্সি নিতে বলতে পারে। ৫-৬ জন হলে ট্যাক্সি নেয়া যায় নয়তো বাসে যাওয়াই ভালো।
তথ্যঃ ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশ -ফেসবুক গ্রুপ থেকে সংগৃহীত
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন