বাংলাদেশের পর্যটন বিকাশে ট্যুরিজম স্যুভেনির নিয়ে কাজ করছেন চার তরুণ। দেশের ঐতিহ্যবাহী সব স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শনের আদলে তৈরি করছেন খুদে প্রতিকৃতি বা মিনিয়েচার রেপ্লিকা, ফ্রিজ ম্যাগনেট, থিমেটিক ফ্রেম, কোট পিন ও বুকমার্ক। এর মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসার পাশাপাশি বাংলাদেশকেও বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চান তাঁরা।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে পাস করা ওই তরুণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তাঁরা জানিয়েছেন, চাকরি নয়, ট্যুরিজম স্যুভেনিরকে লক্ষ্য করে তাঁরা ব্যবসা করতে চান। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো বিদেশেও পরিচিত করতে চান। এ ছাড়া নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে তাঁদের আশা।
এই লক্ষ্যে ওই চার তরুণ ‘হাত বাক্স’ নামে একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন। তাঁদের কারখানা পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ। মেশিন দিয়ে কোনো কিছু তাঁরা বানান না। হাতের নিপুণ দক্ষতায় গড়ে তোলেন মিনিয়েচার রেপ্লিকা, ফ্রিজ ম্যাগনেটসহ অন্যান্য ট্যুরিজম স্যুভেনির। কারখানা থেকে এসব পণ্য তৈরি করে নিয়ে যান আজিমপুরের বটতলাসংলগ্ন তাদের অফিসে। সেখানে এসব পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়, কেউ কেউ সরাসরি অফিস থেকেও তাঁদের পছন্দের স্যুভেনিরগুলো সংগ্রহ করে থাকেন। বর্তমানে কার্জন হল, অপরাজেয় বাংলা, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আহসান মঞ্জিল, জাতীয় সংসদ ভবন ও লালবাগ কেল্লা—এই সাতটি স্থাপত্যের মিনিয়েচার রেপ্লিকা এবং সুন্দরবন, কক্সবাজার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরসহ জাতীয় দিবসগুলো কেন্দ্র করে নির্মিত ফ্রিজ ম্যাগনেট রয়েছে হাত বাক্সের। এ ধরনের পণ্যের বাইরেও একেবারেই দেশি ঘরানার থিমেটিক ফ্রেম, কোট পিন ও বুকমার্কও রয়েছে।
২০১৫ সালে শাফাত কাদির, রবিউল হোসেন জুয়েল, মো. মোরসালিন অনিক ও খাইরুল বাসার সজল নামের চারজন উদ্যোক্তা এসব তৈরির কাজ শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে থাকেন। ২০১৭ সালে তাঁদের তৈরি মিনিয়েচার বাজারে আসে।
হাত বাক্সের ক্রিয়েটিভ হেড ও চিফ ডিজাইনার রবিউল ইসলাম জুয়েল জানান, দেশি সব উপকরণে মিনিয়েচারগুলো তৈরি করছে হাত বক্স। নিখুঁত সব ডিজাইনে তৈরি এসব মিনিয়েচারে বৃহৎ একটি স্থাপত্যের ধারণা পাওয়া যায় নিমেষেই। ক্যামেরা ব্যবহার করে ঐতিহ্যবাহী সব স্থাপত্যের ছবি সংগ্রহ করে মেপেজুকে এসব মিনিয়েচার তৈরির কাজ শুরু হয়।
চারজন উদ্যোক্তা ছাড়া ওই কারখানায় আরো দশজন কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে চারজন নিয়মিত উৎপাদন শ্রমিক। বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যাঁরা পার্টটাইম ভিত্তিতে কাজ করে থাকেন।
এসব ব্যাপারে কথা হয় হাত বক্সের নির্বাহী প্রধান মো. শাফাত কাদিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মূলত ট্যুরিজম স্যুভেনিরকে লক্ষ্য করে এই রেপ্লিকা তৈরির কাজ শুরু করেছি। বিদেশি যেসব পর্যটক বাংলাদেশে আসবেন, তাঁরা যেন যাওয়ার সময় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যগুলোর নিদর্শন নিয়ে যেতে পারেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকেও যাঁরা বিদেশে যাবেন, তাঁরাও যেন বাংলাদেশকে বিদেশের মাটিতে পরিচিত করাতে এসব মিনিয়েচার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন; সেই লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করছেন। মূলত ট্যুরিজম স্যুভেনিরকে লক্ষ্যে করে আমরা ব্যবসার পাশাপাশি দেশকে ব্র্যান্ডিংও করতে চাই।’
এত পেশা থাকতে মিনিয়েচার রেপ্লিকা তৈরির দিকে কেন ঝুঁকছেন—এমন প্রশ্নে হাত বক্সের নির্বাহী প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক ব্যবসা আছে, কিন্তু ট্যুরিজম স্যুভেনির নিয়ে তেমন কিছু নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে, এই সাইটটি এখনো ফাঁকা আছে। যেহেতু ফাঁকা আছে, সেহেতু এখানে নতুন করে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয়। আমরা নতুনভাবে শুরু করেছি বলে আমাদের ব্যবসা এখন ছোট। কিন্তু একদিন এই ব্যবসা আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’
শাফাত কাদির বলেন, ‘আমরা যখন প্রথম এসব পণ্য বাজারে নিয়ে আসি, তখন দাম এখানকার চেয়ে বেশি ছিল। এখন বিক্রি বাড়াতে বেশি পণ্য তৈরি করতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে দামও কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এর ভেতরে মিনিয়েচার রেপ্লিকা বা খুদে প্রতিকৃতির দাম এক হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। আর ফ্রিজ ম্যাগনেটের পণ্যগুলো ২৩০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত আমরা বিক্রি করছি।’এনটিভি অনলাইন
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন