বাংলাদেশি এক তরুণ সরকারি কর্মকর্তার উদ্যোগে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সাসেক্স ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হলো ‘গ্লোবাল এনার্জি মুভমেন্ট’ নামে একটি আন্দোলনের। এর মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা সৌরশক্তি ব্যবহার করে রক্তপাতহীন সবুজ পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখছেন উদ্যোক্তারা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১৫ জন নাগরিকের সমন্বয়ে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের স্বপ্নদ্রষ্টা সাসেক্স ইউনিভার্সিটির ছাত্র মোহাম্মদ তালুত। তিনি বাংলাদেশ সরকারের ইউএনও পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। গত বছর অক্টোবরে তিনি স্কলারশিপ নিয়ে এনার্জি পলিসি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান।
মোহাম্মদ তালুত জানান, বুয়েটে পড়ার সময় তার মাথায় আসে সোলার দিয়ে বিদ্যুতের সকল সমস্যা সমাধান করা যায় কি না। সমস্যা হলো পাওয়ার অ্যাভেইলেবিলিটি ফ্লাকচুয়েটিং, রাতে সূর্য থাকে না, আবার দিনেও মেঘলা থাকতে পারে আকাশ, লাগবে ব্যাটারি, সেটার অনেক দাম ইত্যাদি। পৃথিবীর একপ্রান্ত অন্ধকার হলে অপরপ্রান্তে আলো থাকে। যে প্রান্তে আলো থাকে সেখান থেকে সোলার দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অপর প্রান্তে পাঠানো গেলে বিদ্যুৎ খরচ অনেক কমে যাবে। কিন্তু সেখানে সমস্যা হলো প্রচুর ট্রান্সমিশন লস হবে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হয় খুব কম, এই বিদ্যুৎ এত লম্বা পথ ঘুরে যেতে যেতে কিছুই থাকবে না।
পাঁচ বছর আগে যখন হাইভোল্টেজ ডিসি পাওয়ার ট্রান্সমিশন টেকনোলোজি চলে আসে তখন স্বপ্নটা আবার নতুন করে দেখতে শুরু করলেন মোহাম্মদ তালুত। তিনি বলেন, জনমানবহীন তপ্ত মরুভূমিগুলোতে মেগা সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন করে সেগুলোকে HVDC ট্রান্সমিশন লাইন দিয়ে ইন্টার কানেক্ট করা যেতে পারে, যা একটা গ্লোবাল এনার্জি নেটওয়ার্কের ব্যাকবোন হবে। ইন্টার কানেটিং হাই ভোল্টেজ ডিসি তার যাবে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে, ঠিক যেভাবে ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট কেবল গেছে। চাইলেই পুরো পৃথিবীতে এটা বাস্তবায়ন করা যায় মাত্র পাঁচ বছরেই। কিন্তু বৈশ্বিক রাজনীতির কারণে হবে না। চীন, রাশিয়া আর অ্যামেরিকার মতো রাষ্ট্রগুলো এখানে বড় বাধা। তাই প্রয়োজন একটি বৈশ্বিক আন্দোলনের যার মাধ্যমে ধীরে হলেও বাস্তবায়ন হবে একটি স্বপ্নের। এই স্বপ্ন শুধু কার্বনমুক্ত বিশ্বই দেবে না, দেবে সেই সাথে বিশ্বশান্তিও। এই মুহূর্তে এনার্জি মার্কেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মার্কেট, সবচেয়ে রক্তাক্তও।
গত বছর এই আইডিয়ার জন্য (ইনোভেটিভ আইডিয়া হিসেবে) যুক্তরাজ্যের সাসেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে দশ লাখ টাকার বৃত্তি জিতেছিলেন। আর এবছর শুরু করে দিলেন রক্তপাতহীন সবুজ পৃথিবী গড়ার বৈশ্বিক আন্দোলন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন