ভোটারদের মধ্যে টঙ্গী ও গাছা এলাকায় প্রায় তিন লাখ পোশাক শ্রমিক রয়েছেন।
তাঁদের প্রায় ৮০ শতাংশই নারী।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখন পর্যন্ত নয়জন মেয়র পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, পৌরসভার চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করায় হাসান উদ্দিনের জনপ্রিয়তা আছে। তরুণ ও কর্মিবান্ধব নেতা হিসেবে সুনাম আছে জাহাঙ্গীরের। তবে সবকিছু ছাপিয়ে নারী শ্রমিক ভোটাররাই ফলাফল নির্ধারণ করতে পারেন।
সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ ধরনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গাজীপুর সিটির মোট ভোটারসংখ্যা ১১ লাখ ৩৮ হাজার ২০৪। এর মধ্যে নারী ভোটার ৫ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৮ জন। পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪১৬ জন।
ভোটারদের মধ্যে টঙ্গী ও গাছা এলাকায় প্রায় তিন লাখ পোশাকশ্রমিক রয়েছেন। তাঁদের প্রায় ৮০ শতাংশই নারী। তাই সিটি নির্বাচনের ফল নির্ধারণে সাধারণ নারী ও নারী পোশাকশ্রমিকেরা বড় ভূমিকা পালন করবেন বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) গাজীপুর শাখার সহসভাপতি মুকুল কুমার মল্লিক।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ১৫ মে। তফসিল ঘোষণা হয় গত ৩১ মার্চ। এরপর থেকেই বিভিন্ন কৌশলে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রতীক বরাদ্দ ও আনুষ্ঠানিক প্রচারণা এখনো শুরু না হলেও কোনো প্রার্থী বসে নেই। নগরের ৫৭টি ওয়ার্ডে নিজ নিজ পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠ গোছানোর প্রাথমিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে দলীয় পরিচয়ের বাইরে প্রার্থীদের যোগ্যতা, অতীত কর্মকাণ্ড, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, ভাবমূর্তিসহ বিভিন্ন বিষয় ভোটারদের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে সাধারণ নারী ও নারী শ্রমিকেরা ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবেন—এমন আলোচনা মানুষের মুখে মুখে।
হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচনের অনেক দিন আগে থেকেই বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠানে তরুণ ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করছেন। শ্রমিকনেতা হিসেবেও এলাকায় পরিচিতি ছিল তাঁর। শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজও করেছেন। এ কারণে শ্রমিকদের সমর্থন তাঁর পক্ষে আছে বলে তিনি মনে করেন। আর জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে নারী ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে প্রচার করে আসছেন। শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে তাঁর ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের একটা প্রভাব থাকবে, এটা ঠিক। তবে তার থেকে বেশি থাকবে সাধারণ নারী ও নারী শ্রমিক ভোটারদের।
নারী পোশাক শ্রমিকদের মনোযোগ কাড়তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—বড় দুটি দলের প্রার্থীদের বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকা, কোনাবাড়ী বিসিক শিল্প এলাকা, টঙ্গী শিল্পাঞ্চল পাগাড়, সাতাইশ, ভাদাম, গাছা বড়বাড়ী ও বাসন—এসব শিল্পকারখানা-অধ্যুষিত এলাকা। এসব এলাকায় কীভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা হবে, তার কৌশল এখন থেকেই ঠিক করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
গাজীপুর জজকোর্টের আইনজীবী আসাদুল্লাহ বাদল বলেন, নারী ভোটারদের মধ্যে বেশির ভাগই দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে এসে গাজীপুরে ভোটার হয়েছেন। তাঁরা মূলত বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাকরি করছেন। শ্রমিকদের কাছাকাছি যেতে হলে মালিকদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে হবে।
গাজীপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সরকার বলেন, এখানে নারী ভোটার প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ, যাঁদের বেশির ভাগই শ্রমিক। যিনি শ্রমিকবান্ধব প্রার্থী হবেন, তাঁকেই শ্রমিকেরা বেছে নেবেন বলে তাঁর ধারণা।
টঙ্গী পাগাড় এলাকার কারখানা শ্রমিক সুলতানা পারভীন বলেন, পোশাকশ্রমিকদের অনেক সমস্যার মধ্যে আবাসন ও পরিবহন সমস্যা প্রকট। নারী শ্রমিকদের জন্য এ ধরনের সমস্যা খুবই অস্বস্তিকর। এসব সমস্যা সমাধানে যিনি প্রতিশ্রুতি দেবেন, তিনি শ্রমিকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন। বাইমাইল এলাকার পোশাক কারখানার কর্মী রেশমী আক্তার বলেন, মেয়র পদের প্রার্থীরা নিজেরা না এলেও তাঁদের কর্মীরা ভোট ও দোয়া চাইছেন। দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকার প্রাইভেট ক্লিনিকের নার্স জাহানারা পারভীন বলেন, ‘ভোটটা মূল্যবান সম্পদ। জেনেশুনে যোগ্য প্রার্থীকেই দিতে চাই।’
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন