ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা, দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ শামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ। ঢাকার ডেমরায় ১৯৮৯ সালে একটি টিনশেড ঘর নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান শুরু হয়। মাহবুবুর রহমান মোল্লা দায়িত্ব নেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিকে অন্যতম দেশসেরার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। বিশ্বে মানবাধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে দক্ষিন কোরিয়া ভিত্তিক সংগঠন হেভেনলি কালচার, ওয়ার্ল্ড পিস, রেস্টোরেশন অব লাইট (এইচডব্লিউপিএল)। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের পিচ এম্বাসেডর। শান্তি প্রতিষ্ঠায় তরুণ প্রজন্মসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। এসব কার্যক্রম সম্পর্কে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা-এর সঙ্গে কথা বলেছেন সফিউল আযম
ইয়ুথ জার্নাল: কীভাবে যুক্ত হলেন এইচডব্লিউপিএল এর সাথে?
মাহবুবুর রহমান: ২০১৪ সালে আমি দক্ষিণ কোরিয়া যাই চতুর্থ ইন্টারন্যাশনাল স্কাউট জাম্বুরিতে অংশগ্রহণের জন্য। স্কাউট জাম্বুরিতে অংশ নিলাম সারা বাংলাদেশ থেকে ৭ জন। আমি কন্টিনজেন্ট লিডার হিসেবে এই দলের নেতৃত্ব দেই।
ওখানে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়, যিনি শান্তি নিয়ে কাজ করেন। যুদ্ধমুক্ত সমাজ দেখতে চায়। অনেক কথা হলো। কীভাবে শান্তির বার্তা নিয়ে উনার বিশ্বেও বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যান। আমি মুগ্ধ হই। কৌতুহল বেড়ে যায়। চারিদিকে যখন যুদ্ধের ডামাঢোল, ঠিক তখনেই একজন শান্তির কথা বলছে, বিষয়টি আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করে। আমি একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করি।
ইয়ুথ জার্নাল: মূলত সংগঠনটির শান্তির আহবানটি আপনাকে আগ্রহী করে?
মাহবুবুর রহমান: বাংলাদেশে ফিরে আসার পর সংগঠনটির সঙ্গে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। যুদ্ধহীণ একটা সমাজ দেখতে চায় ওরা, যেখানে মানবতাবোধ, মনুষত্ববোধ, মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা থাকবে। সত্যি বলতে ওদের এসব কর্মকান্ড আমাকে আবেগী করে তোলে।
ইয়ুথ জার্নাল: একজন শিক্ষক হিসেবে সমাজে শান্তির বার্তা পৌছানো আপনার জন্য অনেক সহজ, কীভাবে দেখছেন বিষয়টি?
মাহবুবুর রহমান: দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক সংগঠনটি শিক্ষা নিয়ে কাজ করে, যেহেতু আমিও শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত, আমি আরো বেশি সম্পৃক্ত হয়ে যাই। একজন শিক্ষক হিসেবে আমরাও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাথীদের বিভিন্ন বিষয়ে আদেশ, উপদেশ, অনরোধ করি। একটা শোষণমুক্ত, দ্বন্দহীণ সমাজ, যা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। শান্তির আহবান বিষয়ে আমার কিংবা আমাদের লক্ষ্য এবং এইচডব্লিউপিএল’র অনেকটাই এক ও অভিন্ন, ফলে কাজ করা সহজতর হয়।
ইয়ুথ জার্নাল: আপনিতো সংগঠনটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের একজন পিচ এম্বাসেডর
মাহবুবুর রহমান: আপনি ঠিকই বলেছেন। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে একদল প্রতিনিধি আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসেন এবং আমাদের কার্যক্রম দেখে খুশি হলেন। ওদের সঙ্গে অনেক আইনজীবী ও সাংবাদিকও ছিলেন। আমার কার্যক্রম দেখে আমাকে পিচ এম্বাসেডর সম্মানে ভূষিত করেন।
ইয়ুথ জার্নাল: আপনি মূলত শান্তির বার্তাটি কীভাবে পৌছনোর চেষ্টা করেন?
মাহবুবুর রহমান: আমরা বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করি, অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত আলোচনা করি। নিয়মিত পিচ ওয়াক, পিচ র্যালি হয়, ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুলে এই আয়োজন করি। এসব কাজের সাথে ছাত্র শিক্ষক অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করি। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে একটা সচেতনতা তৈরী হয়।
ইয়ুথ জার্নাল: আপনাদের এসব শুভ উদ্যোগ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পৌছানোর বিষয়ে আপনাদের কোনো উদ্যোগ আছে কি?
মাহবুবুর রহমান: একথা স্বীকার্য যে, যতই আমরা জনগনকে সচেতন করি না কেন, রাষ্ট্র ছাড়া এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ফলে বিভিন্ন সময় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করি। আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
ইয়ুথ জার্নাল: কিছুদিন পূর্বে আপনার স্বাক্ষর অভিযান পরিচালনা করেন
মাহবুবুর রহমান: আপনি ঠিকই বলেছেন, আমরা একটা সাইনিং ক্যাম্পেইন করি। পুরো ঢাকা শহরে শান্তির বার্তা নিয়ে আমরা প্রচারাভিযানে নামি এবং স্বাক্ষর সংগ্রহ করি। এই ক্যাম্পেইনের মূল উদ্যেশ্য ছিল একটা যুদ্ধহীণ, শান্তির সমাজ চাই। স্বাক্ষরগুলো আমরা জাতিসংঘে পাঠাই। সারা পৃথিবী থেকে জাতিসংঘের কাছে এই স্বাক্ষর পাঠানো হয়।
ইয়ুথ জার্নাল: তরুণদের সম্পৃক্ত করে আপনি শান্তি পত্র (পিচ লেটার) অভিযানও পরিচালনা করেন, মূলত কেন এই আয়োজন?
মাহবুবুর রহমান: আমাদের প্রতিটি কার্যক্রমে তরুণদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ থাকে। আজকের তরুণরাই ভবিষ্যত নেতৃত্ব, বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করি। দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি বিষয়ে আমরা পিচ লেটার ক্যাম্পেইন করি, তরুণরা শান্তি বিষয়ে তাদের ভাবনা ও সম্ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরে, এই চিঠিগুলো আমরা সরকার প্রধানের কাছে প্রেরণ করি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন