ইয়ুথ জার্নাল প্রতিবেদক: সমুদ্রে যে পানি আছে এবং এর তলদেশে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে সেই সবধরনের সম্পদকে যদি আমরা টেকসই উন্নয়নের দিকে ধাবিত করতে পারি, তাহলে সমুদ্র অর্থনীতি, জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। খাদ্য, ওষুধসহ বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে আমাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের একটি বড় অংশ আসে সমুদ্র থেকে। তাই সমুদ্র ও উপকূলবর্তী এলাকার বিপন্নপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতকে রক্ষায় প্রয়োজন বহুমূখী পদক্ষেপ।
বিশ্ব সমুদ্র দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ কমিটি কর্তৃক সমুদ্র রক্ষায় উদ্ভাবন: তরুণদের ভূমিকা শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারে বক্তারা এসব বলেন। মানুষের নানাবিধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জলবায়ুর বৈরী থাবায় মহাসাগরগুলোর প্রতিবেশ ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে এর জীববৈচিত্র্য। এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিশ্ব সমুদ্র দিবস পালন করা হয় প্রতিবছরের ৮ জুন। এবছরের প্রতিপাদ্য নিরাপদ/টেকসই সাগরের জন্য উদ্ভাবন।
গত ৮ জুন ২০২০ সোমবার রাত ৯টায় এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কে এম সালাহউদ্দিন, ট্যুরিজম এন্ড হসপিট্যালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সামশাদ নওরীন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাহী, আই ই আর বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ফারুক হোসেন, ইয়ুথ জার্নালের এডিটর ইন চিফ সফিউল আযম, পরিবেশ গবেষক সাদি ইসলাম, সবুজ পরিবেশ আন্দোলনের উৎপল সাহা, তরুণ রাজনীতিক মো. আরিফুল ইসলাম প্রমূখ আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
স্বাগত বক্তব্যে দেলোয়ার হোসেন বলেন, আজকের বাস্তবতায় টেকসই পরিবেশ উন্নয়নে সবুজ প্রকৃতির অংশ হিসেবে আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু সাগরের কথা মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। পৃথিবীব্যাপী এই বিশাল জলরাশিই কিন্তু আমাদের মানব সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল মাধ্যম ছিল। আজ প্রযুক্তির অনেক উন্নয়ন হয়েছে, আমাদের নতুন নতুন উদ্ভাবন হয়েছে অনেক তবুও সাগর/সমুদ্র/মহাসাগরের গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। বরং, গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ।
সফিউল আযম বলেন, আমাদের যেমন প্রয়োজন অর্থনৈতিক উন্নয়ন, যেমন প্রয়োজন পর্যটন শিল্পের বিকাশ, যেমন প্রয়োজন মানুষের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা, যেমন প্রয়োজন সামুদ্রিক সম্পদ ঠিক তেমনই অতীব প্রয়োজন আমাদের সাগরকে টিকিয়ে রাখা। এটি করতে হবে আমাদের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য; আমাদের জীবন ও জীবিকার জন্য।
সামশাদ নওরীন বলেন, মানুষের মধ্যে এখন প্রচন্ড বিবেকবোধ জাগ্রত হয়েছে প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে, প্রকৃতির জন্য কাজ করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। অবশ্যই আমরাও উন্নয়ন চাই, তবে প্রকৃতির সেই উন্নয়ন হতে হবে স্থায়িত্বশীল। মানুষের মৌলিক অধিকারের সাথে সংযোজন করা উচিত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি হতে পারে একটি উন্নত চিন্তার টেকসই প্রতিফলন। বর্তমান বাস্তবতায় বিশ্বব্যাপী যে কঠিন ইমিউনিটি সিস্টেমের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রাণীর গুরুত্ব বর্ননাতীত।
মহিউদ্দিন মাহী বলেন, ভূমি থেকে সমুদ্রের তলদেশ অনেকগুণ বেশি। অথচ এটিকে আমরা অবহেলায় রেখেছি। এখন সময় এসেছে ব্লু একোনমির দিকে ধাবিত হওয়া। পৃথিবীর প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষ সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে উপকূলের কৃষক ও জেলেদের নতুন উদ্ভাবনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
সাদি ইসলাম বলেন, বর্তমান বিশ্ব এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। অদৃশ্য একটি করোনা (কভিড-১৯) ভাইরাসের কাছে বিশ্ব আজ অসহায়। অবশ্য এই অসহায়ত্ত্বের পেছনে দায়ী স্বয়ং মানুষ। যেমনটা ভাবছেন বিশ্বের নামিদামি পরিবেশবিদ, বিজ্ঞানীরা যাদের কন্ঠে একই সুর, পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয়ের ফলেই এমনটি হচ্ছে।
কে এম সালাহউদ্দিন বলেন, আমাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের একটি বড় অংশ আসে মহাসাগর থেকে, তাই এটিকে রক্ষনঅবেক্ষণ করতে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী টেকসই পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন। প্রয়োজন সমন্বয় ও পরিবীক্ষণ, প্রয়োজন যুগোপযোগী সমুদ্র আইন ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন।
কাজী ফারুক হোসেন বলেন, মানুষের প্রয়োজনেই এই সাগরগুলোর তীরে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল শহর, বন্দর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তাই মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে এটি রক্ষার।
উৎপল সাহা বলেন, সমুদ্রকে ভালবাসতে হবে, সমুদ্রের পরিচর্যা করতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।
আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সম্পদকে সমৃদ্ধ করতে হবে।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০১৪ সালে বঙ্গপসাগরে সোয়াকে অব নো গ্রাউন্ডে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রথম মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া, যা সমুদ্রের জীববৈচিত্র সংরক্ষণে ভূমিকা রেখে চলেছে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর উদুরপ্রসারী চিন্তার ফসল উপকূলীয় সবুজ বেস্টনী যেটি আমাদের সামুদ্রিক দুর্যোগের প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এছাড়া সমুদ্রের উপকূলীয় অঞ্চলের সহনশীলতাবৃদ্ধির জন্য সামুদ্রিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। এছাড়া টেকসই পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদের উদ্ভাবনী উন্নয়ন সম্ভবপর হবে। আর এর ফলেই সাগরকে ঘিরে আমাদের শত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন