ভোরের আলোর নির্মল অভিব্যক্তি রাত্রির অন্ধকারের কপাট খুলে নতুন দিনের সূচনা করে। সে আলো অস্পষ্টতাকে স্পষ্ট ও বাক্সময় করে। জড়ের স্থবির অস্তিত্বে জাগায় প্রাণের স্পন্দন, ঝরনার গতিপ্রবাহ। তারুণ্য সেই আলো যা জীবনকে ঔজ্জ্বল্য দান করে, ভাষা দেয় চেতনায়, সৃষ্টি করে নিজস্ব গতিছন্দ। বিপন্ন তারুণ্য স্বভাবের বিপরীত ও ভ্রান্তপথে অগ্রসর হলে অন্ধকার তাকে গ্রাস করে সর্বাংশে। অন্ধকারে নিমজ্জিত তারুণ্য জাতির ভয়ঙ্কর অপচয়। বিনষ্ট হয় তার নিজের অশেষ সম্ভাবনা, নিভে যায় জাতির ভবিষ্যতের আলোকময় দীপ। বিভ্রান্ত তারুণ্য জাতির দুর্ভাগ্যের কারণÑ তারা নিজ নিজ পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতির উৎস, আত্মঘাতী বলেই তারা নির্বোধ। বিজ্ঞান থেকে তারা কোনো আলোক রেণু দৃষ্টিপথে বিচ্ছুরিত হতে দেখেনি। প্রথার কাছে তারা পরাভূত, যুক্তিহীন বিশ্বাসের কাছে তারা দিশেহারা, আত্মজিজ্ঞাসা তাদের মহাজাগতিক চিরন্তন প্রক্রিয়ার সঠিক সন্ধান দেয়নি, বস্তুতান্ত্রিক নয় তাদের বিচার করার পদ্ধতিÑ তাই তারুণ্য আজ জীবনের জন্য হুমকির অপর নাম, অপঘাত, আত্মঘাতের প্রতীক। এই তথ্য অতি অনাকাক্সিক্ষত। বিশ্বময় বিপর্যস্ত তারুণ্য গ্রহ-গ্রহান্তরে, সৌরজগৎ থেকে সৌরজগতে, ছায়াপথ থেকে ছায়াপথে অনুসন্ধান পরিচালনা করার পরিবর্তে সমাচ্ছন্ন একটি ঘোরের মধ্যে। সভ্যতার অগ্রগতির জন্য তা মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বড় দুঃখজনক এই পরিস্থিতি, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমরা প্রগতির সড়ক থেকে নেমে যাচ্ছি কালের ঢাল বেয়ে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নকামী ও উন্নয়নশীল দেশের তারুণ্যই মৌলশক্তি তাতে বিনষ্টির হাওয়া লেগেছে, এর চেয়ে দুঃসংবাদ জাতির কাছে আর কিছুই নেই।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের ক্রমোন্নয়নের ও প্রগতির পেছনে তরুণ সমাজের ভূমিকা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং প্রশংসার দাবিদার। এ দেশের ইতিহাসের স্রষ্টা তরুণ সমাজ বিশেষত সচেতন ছাত্র সমাজ। এ কথা ঠিক যে, প্রবীণরা পথ দেখায়, সাহস জোগায়Ñ দুর্জয় সাহসে, ইস্পাত দৃঢ় মনোবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তরুণ সমাজ, দুঃসাধ্য সাধনের কাজ, নতুন পথ রচনার কাজ তো তরুণরাই করেছে যুগে যুগে। তরুণদের ওপরই আমরা আস্থা রাখি, তাদের চোখের দিকে চেয়ে ভরসা পাই। এরাই আমাদের উন্নয়ন-প্রগতির চাবিকাঠি, আমাদের সামনে চলার শক্তিÑ জাতির আলোকিত ভবিষ্যৎ। আমাদের দুর্যোগ দিনের পরম নির্ভরতার বন্ধু।
সাম্প্রতিক কিছু কর্মকা-ে তরুণদের একটি ক্ষয়িঞ্চু অংশ বিপথগামী হয়ে অন্যায়ের দিকে ঝুঁকেছে, দেশের জন্য, বাংলাদেশের খেটে খাওয়া পরিশ্রমী মানুষের জন্য বদনাম কুড়িয়ে এনেছে। দুর্যোগ বয়ে এনেছে জাতির জন্য, পরিবারের সীমাহীন কষ্টের কারণ হয়ছে। এসব ঘটনায়ও আমরা হতাশ নই, ‘আমরা পরাজিত হয়েছি’ এ কথা বিশ্বাস করতে মন চায় না। সাম্প্রতিক অঘটনগুলোর সঙ্গে জড়িতদের বড় অংশই তরুণ, এই মাটি ও মানুষেরই সন্তানÑ এ বড় পরিতাপের। এদের যথাযথভাবে পরিচর্যা করতে পারলে অন্য পরিশ্রমী তরুণদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এরাও লড়ে যেত দেশের জন্য।
এ দেশের চরম দুর্দিনে দাঁড়িয়েও আমি স্মরণ করিÑ এ দেশ স্বাধীন করতে অগ্রগণ্য ছিল, এ দেশের গণমানুষ, এ দেশের তরুণ, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক আপামর সাধারণ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন কিংবা তারও আগের কথাই যদি বলি তবে মনে আসে, ১৯৪৭-এ যখন দেশ ভাগ হলো, তখনই সচেতন মহল দ্বিধা আর শঙ্কায় ছিল পাকিস্তানের ভাষা কী হবে এই প্রশ্নে। তরুণরাই জিন্নাহর সামনে উচ্চকণ্ঠে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তার অন্যায় আবদারের কাছে বাঙালি মাথানত করবে না। বায়ান্নতে এসে বুকের রক্ত ঢেলে রাজপথ রাঙিয়ে তারা প্রমাণ করেছে তরুণের শক্তি আর শৌর্য-বীর্যের কথা। ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান নিশ্চিত করেছে গণতন্ত্র এবং অতঃপর স্বাধীনতার যুদ্ধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সেই কঠিনতম দুঃসময়ে তো তরুণদের ওপরই ভরসা রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তারাই দেশমাতৃকার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে জাতিকে মুক্ত করে এসেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশেও তরুণদের আত্মত্যাগের ইতিহাস আকাশছোঁয়া, ছোট অর্থনীতির দেশ পুনর্গঠনে তরুণদের অবদান অকল্পনীয়, স্বৈরাচার যখন জাতির কাঁধে চেপে বসেছিল ঠিক তখনো এই তরুণরাই সামনের সারিতে থেকে জাতিকে অভিশাপমুক্ত করেছে। এই হলো আমাদের তরুণদের জয়গাথা, ইতিবাচক বিজ্ঞাপন। ইতিহাসের পথ উল্টে যাওয়ার নয়, তাই সাময়িক এই দুর্যোগ আমাদের জাতিসত্তার প্রতি সচেতন করবে নিঃসন্দেহে, করবে সতর্ক, জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমাদের শিক্ষা দেবে নতুন করেÑ হয়তো তার জন্যই কালের চাবুককষা। ক্ষমতা নয়, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার প্রতি আমাদের সবার দৃষ্টি দেওয়া যে, জরুরি এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়তো আমাদের সে শিক্ষাই দিচ্ছে।
আজকে হয়তো দু-একটি খারাপ খবর আসছে, যেখানে তরুণদের সম্পৃক্ততার বিষয় জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে, এতে হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। কেননা সমগ্র পৃথিবী আজ সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির বিষবাষ্পে জ্বলছে, মানচিত্র দখল হয়ে যাচ্ছে। এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিই ইরাক দখল করেছে, বলেছে সেখানে মানববিধ্বসী অস্ত্র আছে, এখন তারাই ফের বলছেন, ইরাক যুদ্ধ ভুল ছিল। এখন কে দেবে সেই ভুলের মাশুল, কে ফিরিয়ে দেবে মানুষের প্রাণ। যারা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলির ওপর সচেতন নজর রাখেন তারাই বলছেন, আজকের যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তথাকথিত ইসলামিক স্টেট, এই গোষ্ঠীটিও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অনুকূলে কাজ করছে। এই সন্ত্রাসের ভয় দেখিয়েই তারা ইরাক, সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশে নিজেদের শক্তি পাকাপোক্ত করার পাঁয়তারা করছে। হতে পারে তাও সত্য।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় জননী বাংলাদেশও এই ষড়যন্ত্রের বাইরে নয়। আইএসের উপস্থিতি প্রমাণ করতে পশ্চিমাদের আগ্রহ আমাদের সেই শঙ্কার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়Ñ যার বলে তারা এসে সম্ভাবনাময় এই দেশের ভূগোল খামচে ধরবে প্রচ- হিংস্রতায়। বাংলাদেশে তারা একটি স্থায়ী হস্তক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি করতে বদ্ধপরিকর। বিশ্বকে, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে তারা বোঝাতে চায়, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী আস্ফালন শুরু হয়েছে, সেখানে সংখ্যালঘু এবং বিদেশিরা এখন আর নিরাপদ নয়, তাই আমাদের সেখানে যাওয়া প্রয়োজন। কেউ না মানলেও তারা ভাড়াটে অভিভাবকসুলভ আচরণ করতে অভ্যস্ত। তাদের হৃদয়ের কথা বুঝেও আমাদের মতো দেশ নিরুপায় কারণ তাদের সামরিক শক্তি। যড়যন্ত্রকারী আন্তর্জাতিক সেই চক্রটি এখন বেছে বেছে বিদেশি এবং সংখ্যালঘুদের পিছু নিয়েছে, এসব ঘটনায় প্রণোদনা দিচ্ছে। যেন বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গণতন্ত্রের কথিত বন্ধু দেশটির আসল চেহারা আমরা চিনি, দেখা গেছে অতীতে। গণতন্ত্রবিপন্ন দেশগুলোতে তারা হাজির হয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে, মানুষের ওপর নির্বিচারে হত্যাকা- চালিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, লুণ্ঠনের মাধ্যমে দেশটিকে সর্বস্বান্ত করে চলে যায়। এই হলো তাদের প্রকৃত গণতন্ত্রের চেহারা। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়াসহ আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। তবে আশার কথা হলো, যারা ওই দেশটির রক্ষচক্ষুকে উপেক্ষা করতে পেরেছে শেষ পর্যন্ত জয় কিন্তু তাদেরই হয়েছে। আমাদেরও সেই লড়াইয়ের পথ ধরেই এগোতে হবে, দেখাতে হবে নিজেদের সাহস ও বুদ্ধিমত্তা।
আমাদের তরুণদের বোঝাতে হবে মানুষ হত্যায় কোনো ধর্ম নেই, মানুষের রক্তের স্রোতে ভেসে স্বর্গে পৌঁছানো যায় না, বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের যুগে অসভ্যরাই কেবল নির্দোষ মানুষের রক্তের কথা চিন্তা করতে পারে। বাংলাদেশের বড় বড় আলেম, মাওলানা, ইসলামিক চিন্তাবিদ মমিনরাও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, যারা ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করছে তারা বিপথগামী। নিশ্চয়ই তারা একটি সুন্দর ও সুচিন্তিত মত দিয়েছেন। আমাদের চারপাশের তরুণদের এগুলো বোঝানোর দায়িত্ব কিন্তু আমাদেরই। বাবা-মা হিসেবে সন্তানের ভালো-মন্দের খোঁজ রাখাও আমাদের কর্তব্য, শুধু স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েই যদি আমরা মনে করি আমাদের কাজ শেষ, তবে সেটি হবে বড় ভুল। তরুণরা বয়সে কম বলেই তারা তরুণ, অনেক সময় এমন দেখা যায় যে, ভালো-মন্দ বুঝে ওঠার আগেই তারা সিদ্ধান্ত নিতে চায়, এতে দোষের কিছু নেই, বয়সের কারণেই তারা চঞ্চল থাকে। বরং এ ক্ষেত্রে বাবা-মা এবং বড়দের দায়িত্ব হলো তাদের সঙ্গে ইতিবাচক আচরণ করে তাদের শুধরে দেওয়া।
আজ তরুণদের বিপথগামী করার ব্যাপারে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গ এসেছে। এখানে শিক্ষকরা প্রকৃতই দায়ী কী দায়ী নয়, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষকদের দায়িত্ব। প্রসঙ্গ এসেছে শিক্ষকদের মহান দায়িত্ব নিয়ে। একজন শিক্ষকের কী ভূমিকা হওয়া উচিত? প্রাথমিক স্তরে মানুষ গড়ার এই কারিগররা কচি মন ও মগজে বিভিন্ন ভাষার নানা হরফের পরিচয় গেঁথে দেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে শুরু হয় বাস্তবজীবনের নির্দেশিকা গ্রহণের। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সামনে আগামী প্রজন্ম তথা দেশের আগামী নেতৃত্ব বসে থাকে। মহান শিক্ষকরা তাদের অর্জিত জ্ঞান দ্বারা এই শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলেন। এখানে শিক্ষকদের জানাশোনা, গবেষণা, জ্ঞানের স্তর, উচ্চতর বিষয়ে ধ্যান-ধারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মুক্তজ্ঞান ও বিষয়ের মাধ্যম। জ্ঞানের নির্দিষ্ট সীমারেখার বাইরে এ মাধ্যমের বিচরণ। এখানে শিক্ষককে হতে হয় চৌকস ও কৌশলী। একজন শিক্ষকের ধ্যান-ধারণাই হবে জ্ঞানের প্রসারতাÑ অজ্ঞানতা থেকে ক্রমাগত জ্ঞানের জগতে প্রবেশ করা। শিক্ষক নির্দিষ্ট সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না। বরং জ্ঞানের নানাস্তর তিনি আবিষ্কার করবেন প্রতিনিয়ত। তার অনুসন্ধিৎসু এ পথের সারথি হবেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান, বিশ্বজনীনও। আঞ্চলিকতা, জাতীয়তা, রাষ্ট্র, সীমানা, সব কিছুর ঊর্ধ্বে এ বিদ্যাপীঠের স্থান। যে কোনো অঞ্চলের, যে কোনো দেশের, ভাষা, বর্ণ, জাতীয়তার শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। বিচিত্র বিষয়ের বিস্তর জ্ঞান অর্জনের অবারিত ও সীমাহীন সুযোগ কেবল বিশ্ববিদ্যালয়েই পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আরও বিজ্ঞ, উদার, সংস্কৃতিমনা। অজ্ঞতা, কুসংস্কার, সঙ্কীর্ণ মানসিকতার ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষকরা জাতি গঠনে ব্রতী হন। তাদের চিন্তায় কেবল দেশ ও জাতির স্বার্থই প্রাধান্য পায়। কোনো নির্দিষ্ট বেড়াজালের আবরণ তাদের জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান পরিবেশনে বাধা তৈরি করতে পারে না। তিনি শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়ানোর পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সভা, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা, সেমিনারে অংশ নেবেন। নিজে গবেষণা করবেন, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করবেন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানকে সময়োপযোগী করবেন, বিলিয়ে দেবেন শিক্ষার্থীদের মাঝে। উদ্যমী ও প্রত্যয়ী প্রজন্ম গড়ে তুলবেন শিক্ষকরা। নতুন জ্ঞান, উদ্ভাবনী ভাবনা, বিশ্বজনীনতা, আইনের অনুশাসন, দক্ষ জনশক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব প্রদানে এগিয়ে থাকবেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। শিক্ষক কোনো কিছুর বিনিময়েই আত্মমর্যাদা ক্ষুণœ করবেন না। গবেষণা, সৃষ্টিশীল ভাবনা, শিক্ষাদান, জ্ঞানের নতুন দ্বার উন্মোচনে শিক্ষকরা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবেন। কর্তৃপক্ষ নয়, কেবল নিজের বিবেকের কাছেই শিক্ষকরা দায়বদ্ধ থাকবেন। আত্মচেতনা ও আত্মপ্রেরণার এই শিক্ষা শিক্ষকরা জাগ্রত করবেন শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। এখানে কূপম-ূকতা, ধর্মীয় অজ্ঞতা, কুসংস্কার, উগ্রতা স্থান পাবে না। বরং শিক্ষকদের জ্ঞানের আলোকে শিক্ষার্থীরা হবে সংস্কারবাদী।
আমাদের তরুণদের শক্তি সম্পর্কে আমরা অবগত, একটু পথটা ধরিয়ে দিলেই তারা ভালো করবে, তারা পৃথিবীর বুকে দৃষ্টান্ত রাখতে সক্ষম হবে, এ আমাদের শুধু বিশ্বাসই নয় বরং অভিজ্ঞতাও। দেশে এবং দেশের বাইরে সবখানেই আমাদের তরুণরা সুনাম কুড়িয়েছে, আস্থা অর্জন করেছে। হলি আর্টিজান কিংবা কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা কখনো উদাহরণ হতে পারে না। কয়েকজন ভুল পথে পা বাড়ানো তরুণ কখনোই বাংলাদেশের তরুণদের খ্যাতি নষ্ট করতে পারে না। আমাদের মনে বল আছে আর আছে সাহস। আমরা ঘুরে দাঁড়াব এবং রুখেও দাঁড়াব। আমাদের তিনটি বড় নদী আছেÑ পদ্মা, মেঘনা আর যমুনা। আরও ছোট-বড় অনেক নদী এ দেশের বুক চিরে গেছে বয়ে। এই নদীগুলোর জলের মতোই পবিত্র আমাদের তরুণরা, আমরা তাদের দুর্গন্ধে দূষিত হতে দিতে পারি না, এই হোক আমাদের শপথ। আসুন সবাই সম্মিলিত কণ্ঠে উদাত্ত আহ্বান জানাইÑ সম্মুখে সমূহ অন্ধকার, জাগো হে তরুণ! সম্মুখে সমূহ অন্ধকার, জাগো হে তরুণ!
লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন
সাবেক উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন