জহিরের স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত চাকরির পড়াশুনাও করেন। মাসের খরচ বাবদ বাবার দেওয়া টাকা থেকে কিছু অংশ বাচিয়ে প্রতি মাসে নতুন বই কেনেন জহির। তবে লাইব্রেরিতে বইয়ের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের মতো বই কেনা হয়ে উঠছিল না! ঠিক এমন সময় বিভাগের বন্ধুর কাছ থেকে রাজশাহীর ব্যতিক্রম লাইব্রেরির সন্ধান পান। যেখানে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৫০ টাকা কেজি ও মাসের শেষদিন ৩০ টাকা কেজিতে বই বিক্রয় করা হয়।
রাজশাহী শহর থেকে ৫ কিলোমিটার আগে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কসংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের পশ্চিম দিকে লাইব্রেরিটি অবস্থিত। বাজার থেকে একটু পশ্চিমে আসতে বাম দিকে চোখে পড়বে ‘ব্যতিক্রম লাইব্রেরি’র ব্যানার। ব্যানারের পাশ ধরে এগোলেই লাইব্রেরির দেখা মিলবে।
অসচ্ছল গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের বইয়ের জোগান দিচ্ছে রাজশাহীর এই লাইব্রেরি। এখানে মাত্র ৫০ টাকায় পাওয়া যায় পঞ্চম শ্রেণি থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরির বই। লাইব্রেরি ঘুরে দেখা যায়, পছন্দের বই খুঁজতে ব্যস্ত অনেকেই। বইপ্রিয় শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ধরে তাদের প্রয়োজনীয় বই সংগ্রহ করার পর দোকানে রাখা ডিজিটাল মেশিনে ওজন করে নিচ্ছেন। তবে বিকালের পর থেকে বই পাগল শিক্ষার্থীদের পদচারণা এখানে বেশি দেখা যায়। অনেক সময় বই কেনার জন্য তাদের লাইন ধরে দাঁড়িয়েও থাকতে হয়।
ব্যতিক্রম লাইব্রেরি থেকে বই কিনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। কথা হয় বই কিনতে আসা রাকিবুল ইসলাম রাফির সঙ্গে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। রাফি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহে এখানে এসে পছন্দের বই কিনি। অল্প টাকায় প্রয়োজনীয় বই কিনতে পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী তাসবিয়া ইসলাম তুলি বললেন এখানে গল্প, উপন্যাস, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, চাকরি ও ব্যাংক জবসহ ব্যবসায় অনুষদের বই সাশ্রয়ী দামে কিনতে পাওয়া যায়।
বছর তিনেক আগে বদর উদ্দিন শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যতিক্রম লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। তিনি বলেন, আমাদের লাইব্রেরিতে স্বল্পমূল্যে যে বই পাওয়া যায় তা অন্য লাইব্রেরিতে কিনতে গেলে অনেক বেশি মূল্য দিয়ে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে আমরা এ লাইব্রেরির ২টি শাখা করেছি। মূল লাইব্রেরি থেকে ভালো মানের বইগুলো বাছাই করে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রতি কেজি বই ১০০ টাকা এবং মাসের শেষদিনে ৬০ টাকা করে বিক্রি করি। এতে করে শিক্ষার্থীদের বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সময় ও শ্রমের অপচয় কম হয়।
বদর উদ্দিনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। একাডেমিক অথবা চাকরির প্রস্তুতির জন্য অনেক বই প্রয়োজন যা একজন গরিব শিক্ষার্থীর পক্ষে কেনা কষ্টকর। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় এসব বই পুরাতন লাইব্রেরিতে পাওয়া যাচ্ছে যা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। সূত্র: দৈনিক সংবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন