খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় উদাল বাগান উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মাইনী নদীতে একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। সেতু না থাকায় স্থানীয় লোকজন, বিশেষ করে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের নৌকায় নদী পারাপার করতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, মাইনী নদীতে সেতু না থাকায় নদী পারাপারে উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নের দুর্গম ১২ পাহাড়ি গ্রামের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বর্ষা মৌসুমে বন্ধ হয়ে যায় মাইনী নদীর পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত ১২ গ্রামের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। কারণ এই ১২ গ্রামে ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই যুগ যুগ ধরে জীবন-জীবিকা এবং লেখাপড়ার প্রয়োজনে খরস্রোতা এই নদী পারাপারে ছোট নৌকাই একমাত্র ভরসা এলাকাবাসীর।
বোয়ালখালী ইউপি চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা জানান, কাটারুংছড়া, দক্ষিণ কাটারুংছড়া, যৌথ খামার, রাম রতন কারবারীপাড়া, বধন কুমার কারবারীপাড়া, বটতলীপাড়া, গুনো সিন্দু কারবারীপাড়া ও বাদিচান কারবারীপাড়াসহ ওই এলাকার ১২ গ্রামের মানুষ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই মাইনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।
সরেজমিন এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীত মৌসুমে মাইনী নদী শান্ত থাকে। তবে বর্ষা মৌসুমে প্রবল স্রোতে মাইনী হয়ে উঠে উন্মত্ত। তখন নৌকাযোগে খরস্রোতা এই নদী পারাপার কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকাযোগে নদী পারাপার হতে গিয়ে অনেকেই হয়েছেন দুর্ঘটনার শিকার।
বোয়ালখালীর দুর্গম ১২ পাহাড়ি গ্রামের প্রতিটি পরিবার কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এলাকায় কোনো হাটবাজার না থাকায় নদী পার হয়ে যেতে হয় বাবুছড়া কিংবা বড়াদম বাজারে। যৌথ খামারপাড়ার কৃষক আশুতোষ চাকমা বলেন, মাইনী নদীতে সেতু না থাকায় বর্ষা মৌসুমে কৃষিপণ্য বাজারজাত করা সম্ভব হয় না। তাই এলাকার কৃষক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদে নদী পারাপারের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে উদাল বাগান উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানান তিনি।
বটতলী গ্রামের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুপেস চাকমা ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ধনিতা চাকমা বলে, 'আমাদের এলাকায় মাধ্যমিক কিংবা নিম্ন মাধ্যমিক কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় নদী পার হয়ে উদাল বাগান উচ্চ বিদ্যালয় ও বড়াদম উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে হয়। এ দুটি বিদ্যালয় এবং বাবুছড়া কলেজে আমাদের এলাকার ১২ গ্রামের পাঁচ শাতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।' প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বছরে নৌকার মাঝিকে তিন আড়ি করে ধান (৩০ কেজি) দিয়ে নৌকা যোগে নদী পার হতে হয় বলে জানায় তারা।
তারা আরও বলে, 'শীত মৌসুমে মাইনী নদী শান্ত থাকলেও বর্ষা মৌসুমে প্রবল স্রোতের কারণে নদী অশান্ত হয়ে উঠে। তখন আমরা নৌকাযোগে নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারি না। অনেক সময় আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারি না। তাই এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার স্বার্থে মাইনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ জরুরি।'
রাম রতন কারবারি পাড়ার নরেন্দ্র ত্রিপুরা জানান, মাইনী নদীর পূর্ব পারের এই ১২ গ্রামের সহস্রাধিক পরিবারের পাঁচ শতাধিক ছেলেমেয়ে নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত বাবুছড়া কলেজ, উদাল বাগান উচ্চ বিদ্যালয় ও বড়াদম উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। মাইনী নদীর ওপর সেতু না থাকায় বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারে না। তাছাড়া এলাকার কৃষকরাও তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারেন না। তাই উদাল বাগান উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় মাইনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী। তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার আবেদন করেও কেনো সুফল পাওয়া যায়নি।
বর্ষা মৌসুমে নদীর পূর্বপারের ১২ গ্রামের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারে না-এ কথা স্বীকার করে উদাল বাগান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাক্যমনি চাকমা জানান, মাইনী নদীর ওপর সেতু না থাকায় নৌকায় করে নদী পার হয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। অনেক সময় প্রথম সাময়িক ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায়ও তারা অংশ নিতে পারে না। সৌজন্যে- সমকাল
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন