বঙ্গবন্ধু -যদি এই শব্দটিকে ব্যবচ্ছেদ করি তাহলে যা দাঁড়ায়, তা হল বঙ্গ বা বাংলাদেশের বন্ধু, যে বন্ধুর অবদান ছড়িয়ে আছে বাংলার পথেপ্রান্তরে সর্বত্র। যিনি না থাকলে বাংলাদেশ নামের এই দেশটির জন্ম হোতো না।
আমি যদি আমার জীবনে বঙ্গবন্ধু নিয়ে কথা বলি, তাহলে যে মূর্তিটি আমার সামনে ভেসে ওঠে, তা একজন বজ্রকঠিন মানবের। যিনি তাঁর শাণিত কণ্ঠ, প্রবল ব্যক্তিত্ব দিয়ে জয় করে নিয়েছেন লক্ষলক্ষ মানুষের হৃদয়। বাঙ্গালীর ভাগ্যাকাশে যখন দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দিয়েছিল, তখনই আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁর।
আমি এমন একটা পরিবারে বড় হয়েছি, যেখানে বইপড়াটা নিয়মিত অভ্যাসের বিষয় ছিল। ফলে ছোটবেলা থেকেই আমি বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি। যেসব বইগুলো পড়তাম, তার মধ্যে একটা বড় অংশই ছিল বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধুকে জানার প্রবল আগ্রহ ছিল। আমি ইতিহাস ও মুক্তিসংগ্রামের গল্পগুলো অনুভব করার জন্য পড়তাম। আখতার মুকুলের লেখা ‘মুজিবের রক্ত লাল’ বইটি ছিল আমার প্রথম আকর্ষণ। এখনও মনে পরে, আমার বাবা বইটি কিনে এনে আমাকে দিয়ে বলেছিলেন, তুই যদি জীবনে অনেকবড় কিছু নাও হোস তাতে দুঃখ থাকবেনা, কিন্তু এই দেশের ইতিহাস তোকে জানতে হবে, না’হলে মানুষ হিসেবে সেটা হবে তোর সবচেয়ে বড় লজ্জার বিষয়। বঙ্গবন্ধুকে ন্যাক্কারজনকভাবে হত্যার ইতিহাস জানতে হবে, যে মানুষটিকে ছাড়া এই দেশই হোতো না।
বইটির প্রচ্ছদের ছবিতে সেই বলিষ্ঠ মানুষটি তাঁর মাকে জড়িয়ে ধরে হাসছিলেন। আমাদের ইতিহাসের এই মহানায়ককে কেউ এত রূঢ়ভাবে কেন হত্যা করতে পারে, সেটা ছিল আমার ছোট্টমনে বিরাট প্রশ্ন। আমি কোনো উত্তর খুঁজে পাইনি।
বঙ্গবন্ধু পুরো দেশের। সব মানুষের। কোনো দল বা গোষ্ঠীর নয়। কিন্তু এ নিয়ে আমরা আজকাল বিভক্তি দেখি। এটা কি আদৌ থাকা উচিত? বর্তমান প্রজন্ম কি জানে সঠিক ইতিহাস? একজন বঙ্গবন্ধুর অভাব আমাদের দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে শতবছর। আমরা যদি পৃথিবীর সেরা রাজনীতিবিদ ও তাঁদের দেয়া শ্রেষ্ঠ ভাষণের তালিকা দেখি, এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণ অন্যতম। এই ক্ষুদ্র দেশের ইতিহাস একজন মহান নেতা ছিলেন, যাকে কোনো দল বা গোষ্ঠীতে বিভক্ত করা কোনোভাবেই সমিচীন নয়।
এখনকার প্রজন্ম সেভাবে ইতিহাস জানতে আগ্রহী কীনা আমার জানা নেই। যদি এই ইতিহাসগুলো প্রতিটি শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়, তবে অনেকেই হয়তো জানবে, কিন্তু বেশিরভাগই তা তাদের পরিক্ষার খাতার নম্বর বাড়ানোর জন্য জানবে। কিন্তু এমনটা হলে চলবেনা। বাড়াতে হবে আগ্রহ, হৃদয় দিয়ে ধারণ করতে হবে এই ইতিহাস।
বঙ্গবন্ধু আমাদের রাষ্ট্রের নায়ক। তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে নৃশংসতা ও অকৃতজ্ঞতার যে বিরল নজির স্থাপন করা হয়েছে, তার পাপমোচন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু, আমরা যদি সঠিক ইতিহাসটা জানি এবং দেশকে ভালোবাসি, তবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করবার দায়িত্ব নিতে হবে নতুন প্রজন্মকে।
রুদমিলা মাহবুব
শিক্ষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন