৪২ বছর আগে এমন একটি দিনে শুধু বাংলাদেশ নয়, ধরিত্রীর অবারিত ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্ট-নৃশংস-বর্বরতম যে ঘটনাটি সমগ্র বিশ্ববাসীকে অবাক বিষ্ময়ে দেখতে হয়েছে, সেটি হল সপরিবারের এ জাতির জনক, রাজনীতির মহাকবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্মম হত্যকান্ড। এই হত্যাকাণ্ড শুধু বাঙ্গালী নয় বিশ্বের সমগ্র শুভ, মঙ্গল ও কল্যাণকামী বিবেকবান জনগোষ্ঠীকে কাঁদিয়েছে।
বাংলার সমাজ ইতিহাস প্রায় তিন হাজার বৎসরের পুরনো। এই ইতিহাস শুধু ভিনদেশী শাসকদের শাসনের কথা চিত্রিত করেনি, করুণভাবে উল্লেখ করেছে তাদের শোষণ প্রক্রিয়া এবং এতদঅঞ্চলের জনগোষ্ঠীর বঞ্চনা-বৈষম্যের নির্মমগাঁথা। আর্য, দ্রাবিঢ়, রাঢ়, মৌর্য, তুর্কী, পাঠান, মোগল, ইংরেজ, পাকিস্তান শাসিত এ পূর্ব বাংলাকে সকলেই পরম্পপরায় এক পশ্চাৎপদ, অনগ্রসর ও অনড়সমাজে পরিণত করেছে। আমরা যাকে বাংলার স্বাধীন নবাব হিসেবে জানি তিনি বাঙ্গালী ছিলেন না, ছিলেন তুর্কী। তাঁর মাতৃ ও দাপ্তরিক ভাষা ছিল ফার্সী। এই তিন হাজার বছরের বিশ্লেষণে এটি অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, জাতির জনক বঙ্গালীর হৃদয়ের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার অকৃত্রিম বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই হচ্ছেন এই বাংলার সর্বপ্রথম স্বাধীন রাষ্ট্রনায়ক। এ জন্যই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার ইতিহাসে নয়, ভারতবর্ষসহ বিশ্ব ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় হিসেবে সুঅধিষ্ঠিত।
ষোড়শ বা সপ্তদশ শতাব্দীতে বহু বিদেশী পর্যটকের কাছে এ অঞ্চল খুবই আকর্ষণীয় ছিল বহুবিধ উৎপাদন সামগ্রীর জন্য। মসলিনসহ নানাবিধ সুতি-বস্ত্র, স্বর্ণ, রৌপ্য, অলংকার, মসলা, নীল ইত্যাদির জন্য এটি ছিল প্রাচ্যের একটি সমৃদ্ধ ভূ-খন্ড। কিন্তু এদেশ কেন এখনো উন্নয়নশীল দেশ, তা উপলব্ধি করতে হবে। অতীতের বৈষম্য চিত্র যদি বিশ্লেষণ না করা হয় তাহলে বুঝা যাবেনা কেন এ অঞ্চলে মানুষ এত বেশী স্বাধীনতাপিপাসু হয়েছে। আর্থ-সামাজিক প্রচন্ড বৈষম্য সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতিকে নিষ্পেষিত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এদেশের আপামর জনগণ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে উদ্ধুদ্ধ হয়ে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এক কঠিন স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং সর্বোপরি ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে বঙ্গবন্ধুর সরকার প্রায় ধংসস্তুপে পরিণত একটি দেশের পুনর্গঠনে কার্যকর পদক্ষেপ এবং বিশাল সাফল্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার মাধ্যমে দেশকে অনগ্রসর করা চেষ্টা চালায়। আজ সে জন্যই নতুন করে এবং বার বার বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা, সমাজ, রাজনীতি-রাষ্ট্র ইত্যাদি আধুনিক ও প্রাগ্রসর দর্শনকে নতুন প্রজন্মের কাছে সুষ্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যেন বিভ্রান্তি ও নষ্ট কৌশল দ্বারা জাতি কখনো পথ না হারায়।
বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতির মহান কিংবদন্তী নেতা ও বাঙ্গালী জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান। আজকের দিনে আবারও তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং স্বর্গের অতি উঁচুমার্গের আসনে মর্যদাসীন করার জন্য স্রষ্টার দরবারে প্রার্থনা জানাচ্ছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন