বছর ঘুরে আবার এল শারদীয় দুর্গাপূজা। উৎসব মানেই ঘোরাঘুরি সারা দিন। আর এতে শরীর হয়ে যেতে পারে অসুস্থ। তাই উৎসব সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে উদ্যাপনের পাশাপাশি সুস্থ থাকার জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। এ সময় এই প্রচণ্ড গরম তো একটু পরেই ঝুমবৃষ্টি হতে পারে। আবার রাতের প্রথম ভাগে গরম তো শেষ ভাগে ঠান্ডা। এমন একটা আবহাওয়ায়ও ঘোরাঘুরি থেমে থাকবে না। গরমে যেন শরীর পানিশূন্য না হয়ে যায়, সে জন্য বেশি করে পানীয় খেতে হবে। একটানা না হেঁটে মাঝেমধ্যে একটু বসে নিতে হবে। তাহলে বেশি ক্লান্ত হবেন না। আবার বৃষ্টিতে ভিজে যেন জ্বর না আসে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
কী কী স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে?
শরীরে পানিস্বল্পতা, সর্দি-কাশি ও জ্বর, পেটের পীড়া
পূজার দিনগুলোতে বেশির ভাগ সময়ই মূলত বাইরে থাকা হয়। গরমের কারণে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হয়, তা হলো পানিস্বল্পতা। আর বৃষ্টিতে ভিজলে আবার লাগতে পারে ঠান্ডা-সর্দিকাশি। তাই সাবধানে থাকতে হতে আর সঙ্গে নিতে হবে ছাতা। আর ডায়াবেটিস রোগী ও শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। কেউ কেউ ঘোরাঘুরির সময় বাইরের খাবার খেয়ে থাকেন। তবে খাবার যেন বেশি তেল-মসলাযুক্ত, ভাজাপোড়াযুক্ত না হয়। খাবার পচা, বাসি কি না, খেয়াল রাখা উচিত।
পর্যাপ্ত ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে রাখতে হবে
গরমে ও অনেকে দৌড়াদৌড়ির ফলে শরীর থেকে প্রচুর লবণপানি বের হয়ে যায় বলে শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। সাধারণত এর ফলে শরীরের রক্তচাপ কমে যায়, দুর্বল লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে। পানিস্বল্পতা গরমের খুবই সাধারণ সমস্যা হলেও অবহেলা করলে তা মারাত্মক হয়ে যেতে পারে। এ বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। তবে এই পানি বিশুদ্ধ না হলে তা থেকে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
খাবার যেমন হওয়া উচিত
যেহেতু ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়, সেহেতু লবণযুক্ত পানীয় যেমন খাওয়ার স্যালাইন বা ডাবের পানি বেশি করে পান করা যেতে পারে। নানা রকম ফল এবং লেবুর শরবত শরীরের প্রয়োজনীয় পানি ও লবণের ঘাটতি মেটাবে। ভাজাপোড়া, অধিক তেল, মসলাজাতীয় খাবার একদমই এড়িয়ে যেতে হবে। চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত।
একটানা পরিশ্রম না করাই ভালো
যাঁরা নানা ধরনের কেনাকাটা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাঁদের এদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। একটানা ছোটাছুটি করলে পরিশ্রান্ত হবেন তাড়াতাড়ি। এর ফলে অনেকের মাথাব্যথা হতে পারে। একটানা না হেঁটে কিছুক্ষণ বসে জিরিয়ে নিন। সারা দিনের মাঝ সময়ে, অর্থাৎ দুপুরে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার ঘুরতে বের হতে পারেন। এতে ক্লান্ত হবেন না, চাঙা লাগবে।
ছাতা রাখুন সঙ্গে
রোদ ও বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সঙ্গে ছাতা রাখুন। এই রোদে ঘোরাঘুরি করলে হতে পারে মাথাব্যথা; অতিরিক্ত ঘাম থেকে দেখা দিতে পারে পানিস্বল্পতা। শুধু কি তা–ই? ত্বক পুড়ে কালো হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই বাইরে বের হলে অবশ্যই সঙ্গে ছাতা রাখুন। আবার হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে আসতে পারে জ্বর।
রোগীদের সচেতনতা
ঘুরতে বের হলে বেশ পরিশ্রম হয়। বেশি পরিশ্রম করলে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক কমে যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের এমনটি বেশি হয়ে থাকে। এর ফলে মাথা ঘোরে, মাথা ঝিঝি করে, অস্থির লাগে, চোখে অন্ধকার দেখে, মেজাজ খিটমিটে হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। এসব লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মিষ্টিজাতীয় খাবার তাড়াতাড়ি খেতে দিতে হবে। এ ছাড়া হার্ট, কিডনি, লিভারের রোগীদের সাবধানে বের হতে হবে।
শিশুদের যত্ন
বিশেষ করে বাচ্চাদের যতটা সম্ভব কড়া রোদ-বৃষ্টি থেকে নিরাপদে রাখতে হবে। বাড়ি থেকে ছোট বোতলে পানি নিতে হবে। শিশুদের অল্প ঘামেই পানিস্বল্পতা হতে পারে। তাই একটু পরপর পানি খাওয়াতে হবে। ডাবের পানিও খাওয়াতে পারেন। ছয় মাস বয়সের আগ পর্যন্ত নবজাতককে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
বাসায় ফিরে
সারা দিন রোদে ঘুরে বাসায় এসেই ঠান্ডা পানি খাবেন না। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর খাবেন, তাহলে সর্দি বা ঠান্ডা লাগার ভয় থাকবে না। আর বৃষ্টিতে ভিজে গেলে যত দ্রুত সম্ভব ভেজা কাপড় পরিবর্তন অরে ফেলতে হবে। বাইরে থেকে এসে বিভিন্ন ফলের জুস বা লেবুর শরবত খেতে পারেন। এতে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে বের হয়ে যাওয়া পানির ঘাটতি পূরণ হবে।
সারা দিনই ঘোরাফেরার ফলে শরীরে ব্যথা অনুভব হবে। তাই ফিরে গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ব্যথা ও ক্লান্তি অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে।
ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায়
সহযোগী অধ্যাপক মেডিসিন বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন