বাবা গাছ লাগাতে পছন্দ করতেন, ছিল কৃষিকাজ ও শাকসবজির বাগান করার নেশা। বাবার এই শখ বাবুরও ভীষণ ভালো লাগত। সে থেকেই পরিবেশ নিয়ে কাজ করার ঝোঁক হয় তারও। বাবু ২০০৭ সালে যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন, তখন থেকে নানা সামাজিক সংগঠনে যুক্ত হন। অনেক কাজের পাশাপাশি ভাবতে থাকেন ছোটবেলার সেই ঝোঁক নিয়ে। একে একে স্কুল কলেজ পেরিয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর সিদ্ধান্ত নিলেন অন্যরকম এক সংগঠন গড়বেন, যেটি কাজ করবে পরিবেশ নিয়ে। মাথায় এলো 'সবুজ বাংলাদেশ' নামটি। নিজ জেলা লক্ষ্মীপুর থেকে শুরুর করার পর এই সংগঠনের কার্যক্রম এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী।
বাবুর পুরো নাম ইসমাইল হোসেন বাবু। স্নাতক শেষ করেছেন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার দক্ষিণ চর মার্টিন গ্রামে।
২০১৭ সালের ৫ মে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সবুজ বাংলাদেশ। পরিবেশ উন্নয়নের জন্য বৃক্ষরোপণ ও নানাবিধ সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি সংগঠনটি মাদকবিরোধী আন্দোলন ও যুব উন্নয়ন নিয়েও কাজ করে। ইতোমধ্যেই এটির সদস্য সংখ্যা দু'হাজার ছাড়িয়েছে। কাজ করেছে ২৪টি জেলার ৩৮টি উপজেলায়। লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, ঢাকা, গাজীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ভোলা ও বরিশালে নানা কর্মসূচি পালন করেছেন সবুজ বাংলাদেশের সদস্যরা।
২০১৭ ও ২০১৮ সালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দশ হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয় সবুজ বাংলাদেশ। ২০১৯ ও ২০২০ এ দ্বিগুণ হয় গাছের সংখ্যা। স্থানীয় পর্যায়ে নার্সারি প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ৬৪ জনকে। এছাড়াও পরিবেশ উন্নয়নে সচেতনতামূলক সেমিনার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, পরিবেশ বিষয়ক শর্টফিল্ম, ডকুমেন্টারি, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ উন্নয়নমূলক ইয়ুথ কনফারেন্স, মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, পরিবেশ বিষয়ক সেমিনার 'আমাদের দায়িত্ব', ইত্যাদি আয়োজন করেছে সংগঠনটি।
জানা গেল, কৃষি উন্নয়নে কৃষকদের মৌসুম ভিত্তিক বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ, বীজ বিতরণ, কৃষকদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রীণ ল্যান্ড প্রজেক্টের মাধ্যমে কৃষকদের সার, বীজ বিতরণ, কৃষকদের অধিকার আদায়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্নধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সবুজ বাংলাদেশ। কৃষকদের মধ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ১৫০ জনকে, আর বর্গাচাষে সফল কৃষকদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও প্রদর্শনী নিয়ে স্কুলপড়ুয়াদের মাঝে মাদকবিরোধী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি তরুণদেরকে সামাজিক কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ্ব করতে দেয়া হচ্ছে যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণ।
শুধু নানা কর্মসূচিই নয়, সংগঠনের ঝুলিতে যোগ হয়েছে বেশকিছু পুরষ্কার। প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল হোসেন বাবু ২০১৯ সালে পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা ও প্রচার ক্যাটাগরিতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থানে জাতীয় পরিবেশ পদক লাভ করেন। এছাড়া জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠনের শুভেচ্ছা স্মারক ও সম্মাননা অর্জন করেছে সবুজ বাংলাদেশ।
সবুজ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল হোসেন বাবু বললেন, মনোবল এবং সততা নিয়ে কাজ করে যেতে চাই। সবুজ বাংলাদেশ অল্পসময়ে এতদূর এগোবে ভাবিনি। সফলতার অন্যতম কারণ, সবুজ বাংলাদেশ নামটাই সকলে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন। আগামীতেও আমাদের কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করতে চাই। পরিবেশবান্ধব ও কৃষিসমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি আমরা। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা না করতে পারলে দেশের ভবিষ্যত হুমকিতে পড়বে। বাসযোগ্য দেশ তথা সকলের জন্য সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ার কাজে তরুণদেরকে মনেপ্রাণে এগিয়ে আসতে হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন