কবি হেলাল হাফিজের কবিতায় নানান রকম কষ্টের মধ্যে নখের কষ্টের কথাও আছে। কবিতার ভাব হিসেবে ভাবা হোক আর না হোক, নখের কিন্তু কষ্ট হতেই পারে। নখের জন্য কষ্ট হওয়ার উদাহরণ চিকিত্সাবিজ্ঞানে হরহামেশাই ‘বাস্তব’। তাই নখের যাতে কষ্ট না হয়, নখ সুন্দর ও সুস্থ থাকে, সেই চেষ্টা তো করাই যায়। নখের যত্ন নেওয়াও তেমন কষ্টকর নয়। একটু খেয়াল রাখলেই সুস্থ্য ও সুন্দর থাকবে নখ।
ঠিকঠাক খাবার খাওয়া, নিয়ম মেনে নখ কাটা ও যত্ন নেওয়া, নখে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার কমিয়ে আনা—এসব সাধারণ কিছু বিষয় মেনে চললে নখ ভালো থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতামত এমনটাই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক হরষিত কুমার পাল বলেন, শরীরের সার্বিক সুস্থতার অংশ হিসেবে নখের সুস্থতায়ও সুষম খাদ্যাভ্যাস প্রয়োজন। ‘সুষম’ বলতে বোঝায় ছয়টি পুষ্টি উপাদান সঠিক পরিমাণে প্রতিদিন খাওয়া, যা নখ সুস্থ রাখতে কাজে দেবে। এ ছাড়া মেনে চলতে হবে পরিচ্ছন্নতার সাধারণ নিয়মগুলো।
বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি জানান, অতিরিক্ত সাবান ব্যবহারের ফলে নখ শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে।
নখের কিছু অস্বাভাবিকতা
আয়রনের অভাবে নখের আকৃতির পরিবর্তন হতে পারে (চামচের মতো গর্ত হতে দেখা যায়), নখ ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। অন্য কিছু রোগে নখের ওপরের দিকের বক্রতা অস্বাভাবিক দেখাতে পারে। নখের নিচে বা নখের আশপাশে রক্তপাত, নখের আশপাশে ব্যথা বা ফুলে ওঠা, নখের নিচে আঁচিল, নখ ফেটে যাওয়া, নখ উঠে আসা, নখের রঙে অস্বাভাবিকতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। নখের আকৃতির পরিবর্তন, আশপাশের ত্বকের ও খাঁজের কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের অভাবে নানান অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। এগুলোকেও অবহেলা করা যাবে না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাধারণ যত্ন
কারও নখ দ্রুত বাড়ে, কারও ধীরে। নিজের নখের বৃদ্ধি হারের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর নখ কেটে ছোট রাখুন। তবে একেবারে গভীর করেও নখ কাটা উচিত নয়, সামান্য সাদা অংশ রেখে নখ কাটুন। নখের কোণের বাড়তি অংশ বা চামড়া টেনে তুলবেন না। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য এসব বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। দাঁত দিয়ে নখ কাটার অভ্যাস থাকলে বদলে ফেলুন।
পরিচ্ছন্নতা
সাবান ও কুসুম গরম পানির সাহায্যে নখ ও এর আশপাশ পরিষ্কার রাখুন। প্রয়োজনে নরম ব্রাশ ব্যবহার করুন। তবে নখ বা আঙুল ভেজা অবস্থায় রাখা ঠিক নয়।
বাড়তি যত্নে নিয়মিত যা করবেন
রাতে ঘুমানোর আগে পেট্রোলিয়াম জেলি বা ভ্যাসলিন নখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন, তাহলে নখ শুষ্ক হবে না। ভ্যাসলিন পাতলা করতে চাইলে এর সঙ্গে ড্রপারের সাহায্যে সামান্য নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলও মিশিয়ে নেওয়া যায়।
লেবু ব্যবহারে নখের হলদে ভাব চলে যায় এবং নখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। লেবুর রসের সঙ্গে এর চার গুণ জলপাই তেল (নখে হলদে বা কালচে দাগ বেশি থাকলে চার গুণ নয়, লেবুর রসের দ্বিগুণ তেল নিতে হবে, তাহলে আনুপাতিক হারে লেবুর রস বেশি নেওয়া হবে) মিশিয়ে হালকা গরম করে তাতে নখ ডুবিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়া লেবু দিয়ে নখ ঘষে নিয়ে ধুয়ে ফেলার পর ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন।
মধু ও এর দ্বিগুণ নারকেল তেল হালকা গরম করে তুলার বলের সাহায্যে ঘুরিয়ে নখে মালিশ করুন। চাইলে হাত দিয়েও মালিশ করতে পারেন, তবে তুলার বলই বেশি ভালো। এ মিশ্রণ নখকে আর্দ্র রাখে, নখের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতেও কাজ করে।
.
.
নখের প্যাক
ডিমের অর্ধেক কুসুম ও ২ চা–চামচ ঘন দুধের মিশ্রণ তুলার বলের সাহায্যে নখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক দিন এই মিশ্রণ ব্যবহার করলে নখ সুস্থ থাকে ও নখে পলিশের কাজ হয়।
প্রসাধন ব্যবহার
প্রসাধনসামগ্রী বিনা প্রয়োজনে ব্যবহার না করাই ভালো। প্রসাধনসামগ্রীর কারণে নখ ও এর আশপাশের ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। নখ ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে, স্বাভাবিক রং নষ্ট হয়ে পড়তে পারে। নখের আশপাশের ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, ফেটে যেতে পারে, উঠেও আসতে পারে। কিউটিকল এবং নখের গোড়ার দিকের সাদাটে অংশের ক্ষতি হতে পারে। প্রদাহ হতে পারে। আর শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রসাধনসামগ্রী এড়িয়ে চলা ভালো। শুধু উত্সব-অনুষ্ঠানে ব্যবহার করুন এবং যত দ্রুত সম্ভব উঠিয়ে ফেলুন। তবু প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার না করাই ভালো।
নেইলপলিশ লাগাতে হলে নখ ভালোভাবে ধুয়ে প্রথমে পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা নেইল প্রাইমার লাগিয়ে নিন। তাহলে পরে নখ শুষ্ক হবে না। এর দুই মিনিট পর যেকোনো একটি বেস রঙের নেইলপলিশ লাগিয়ে নিন। শুকানোর পর পছন্দমতো রঙের নেইলপলিশ লাগান। তবে খুব ঘন করে নেইলপলিশ লাগাবেন না, এতে নখ ফেটে যেতে পারে।
নখ যখন আপনার সৌন্দর্যের একটি অংশ, তার খেয়াল রাখাও আপনার জন্য জরুরি। নিয়মিত খাবার ও সাজগোজের ফাঁকে নখের কথা মনে রেখে বাড়তি একটু যত্ন নিলেই নখের কষ্ট বিদায় নেবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন