সুনামগঞ্জের নারীদের কাছে যাত্রী রানী এখন সাহস আর সংগ্রামের প্রতীক। আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের অনুপ্রেরণার নাম যাত্রী রানী। শহরের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশাচালক যাত্রী রানী বলেন, নারী বলে পারবে না, এমন কথা কেউ যেন বলতে না পারে, সে জন্যই বহু চ্যালেঞ্জ নিয়ে গত ৮ মাস ধরে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার নির্বাহ করছেন যাত্রী।
যাত্রী রানী মনে করেন, পুরুষরা করতে পারবে, নারীরা করতে পারবে না, এটি হতেই পারে না। সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে সব কাজেই যে কেউ সফল হতে পারবে। অটোরিকশা চালাতে চালাতেই কথাগুলো বলছিলেন যাত্রী রানী দত্ত।
৬ জনের সংসারে মা শুভা রানী বর্মণ, স্বামী হৃদয় দত্ত এবং ১ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। যাত্রী রানী জানান, জন্মের পর দিনমজুর বাবা দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ মারা যান। মা শুভা রানী বর্মণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালিয়েছেন। যাত্রীও শিশুকাল থেকেই মায়ের সঙ্গে কাজ করতেন। বয়স যখন ১০ বছর তখন নিজের উদ্যোগে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেন। এক সময় দিনমজুর হৃদয় দত্তের সঙ্গে বিয়ে হয় যাত্রী রানীর। তবে অভাব তার পিছু ছাড়ে না। একপর্যায়ে যাত্রী রানী সিদ্ধান্ত নিলেন স্বামীকে অটোরিকশা কিনে দেবেন। বিভিন্ন স্থানে চেষ্টা করেও যখন টাকা ধার পাননি, তখন স্বামীকে কিস্তিতে কিনে দিলেন অটোরিকশা। অথচ অটোরিকশা চালিয়েও স্বামী খুব একটা সুবিধা করতে পারলেন না। কিস্তির টাকা শোধ দিতে না পেরে এক সময় মরিয়া হয়ে নিজেই অটোরিকশা চালানো শেখেন যাত্রী রানী। আর এরপর থেকেই শুরু হলো যাত্রী রানীর অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠার গল্প।
যাত্রী রানী বলেন, 'প্রথম দিন অটোরিকশা চালানোর সময় সরু সড়কে ঢুকে অটোরিকশা ঘুরাতে পারতাম না। আশপাশের মানুষের সাহায্য নিয়ে নেমে টেনেহেঁচড়ে ঘুরাতাম। প্রথম দিন আমি উপার্জন করেছি ১১শ' টাকার ওপরে। সপ্তাহখানেক পর ভালোভাবে চালাতে সক্ষম হই। স্বামী বেকার থাকা সত্ত্বেও এখন আমার সংসারে সচ্ছলতা আসছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আমি অটোরিকশা চালাই শহরে। আমার কর্মের মধ্য দিয়ে আমি প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। আমাকে দেখে অন্য নারীরাও নানা কাজে মনোযোগী হবে এবং নিজেদের স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করবে। সংসারের অভাব, ঝগড়া কোনোটিই আর স্পর্শ করতে পারবে না তাদের।'
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন