আশি ও নব্বই দশকের ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক জসিম। ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালের আজকের এইদিনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয় তার। আজ এই নায়কের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী।
তার মৃত্যুর পর এফডিসির ২ নম্বর ফ্লোরকে জসিম ফ্লোর নামকরণ করা হয়। এই ফ্লোরের দেয়ালে তার নামফলক রয়েছে। এক সময় যেখানে তিনি শুটিং করেছেন সেখানে এখন তিনি কেবলই স্মৃতি।
চিত্রনায়ক জসিমের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করছে চলচ্চিত্রের শিল্পীরা। দিনটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে বিএফডিসিতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এমনটাই জানান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।
জসিম ছিলেন একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক ও ফাইট ডিরেক্টর। তার প্রকৃত নাম আবদুল খায়ের জসিম উদ্দিন। ১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার কেরানিগঞ্জের বক্সনগর গ্রামে তার জন্ম হয়। লেখাপড়া করেন বিএ পর্যন্ত।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। একজন সৈনিক হিসেবে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে লড়েছেন তিনি। ১৯৭৩ থেকে তার অভিনয় জীবন শুরু। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে গেছেন। ঢাকার ছবিতে এই জসিমই নতুন ধারার মারপিট শুরু করেন।
দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিতে প্রথম অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয়। ‘দোস্ত দুশমন’ হিন্দি ‘শোলে’ ছবির রিমেক। এখানে জসিম গব্বর সিং-য়ের খলনায়ক চরিত্রটি রুপদান করে ব্যাপক আলোচিত হন। এরপর খলনায়ক হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন একক রাজত্ব করেন ঢালিউডে।
দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর পরিচালনায় ‘সবুজ সাথী’ সিনেমায় প্রথমবার নায়ক হিসেবে হাজির হন তিনি। তখনই নায়ক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন জসিম। এরপর খলনায়ক হিসেবে আর অভিনয় করেননি এই অভিনেতা। জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় আশির দশকের প্রায় সকল জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতেই অভিনয় করেছেন এই অ্যাকশন অভিনেতা। তবে শাবানা-রোজিনা এর সাথে তার জুটিই সবচেয়ে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তাকে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা যেত তাকে।
জসিমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন নায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক সিনেমার নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তের মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন।
জসিম প্রায় দুইশত সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘লালু মাস্তান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘স্বামী কেন আসামী’ ‘লাল গোলাপ’, ‘দাগী’, ‘টাইগার’,‘হাবিলদার’, ‘ভালোবাসার ঘর’ ‘সুন্দরী’,‘কসাই’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’ উল্লেখযোগ্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন