ফেসবুকের ন্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকলে সহজে বের হওয়া কঠিন নিজের দেয়া কোন পোস্ট বন্ধুদের পড়তে কিংবা শেয়ার করতে দেখলে কার না ভাল লাগে! সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পাহাড়ের কিছু সংখ্যক তরুণ-তরুণীর প্রায় প্রত্যেকের ছবি সম্বলিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাজনের করা পোস্ট দেখার সুযোগ হয়েছে। যারা চুড়ান্তভাবে মনোনীত হলে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন পদে যোগদান করার সুযোগ পাবেন। ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল পাহাড়িদের জন্য নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ। খুব সম্ভবত এই ৩৮তম ফলাফলের মধ্য দিয়ে কোটা প্রথার সমাপ্তি হবে। শতকরা ৫ জন নিয়োগের কোটা পদ্ধতি থাকলেও আগামীতে তা আর থাকছে না। এবারে যারা নির্বাচিত হয়েছেন নিঃসন্দেহে মেধাবী এই নিয়ে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের বিরাট একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগের পর পরেই নিজেদের একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। অনেকে নিজেদের একাডেমিক পড়ালেখার চাইতে বিসিএস পড়ালেখাকেই অধিক প্রাধাণ্য দিয়ে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি ব্যবহারকারিদের মধ্যে প্রায় সকলেই বিসিএস পরিক্ষার্থী বলে দেশের শীর্ষস্থানীয় একাধিক দৈনিকে প্রথম পৃষ্ঠায় একাধিকবার লিড নিউজ হতে দেখেছি।
এখনকার ছাত্রছাত্রীদের দোষ দিয়ে কী লাভ? উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন শুধু ছাত্রছাত্রীদের নয়, অনেক অভিভাবকেরও প্রবল আগ্রহ দেখা যায়। ইতিহাসও তাই বলে। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুও ১৯১৯ সালে সিটি অব ক্যালকাটা জাহাজে চড়ে সেপ্টেম্বর মাসে ইংল্যান্ডে পা রেখেছিলেন, উদ্দেশ্য ছিল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পাশাপাশি আইসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার। হাতে থাকা আট মাসের প্রস্তুতি নিয়ে আইসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। অল্প প্রস্তুতিতে অংশ নিয়ে ফল বের হলে পাশ করতে দেখে শুধু অবাকই হননি, তিনি সে পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিলেন বলে জানা যায়। যদিও তিনি ১৯২১ সালে ২২ এপ্রিল আইসিএস থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। মজার বিষয় হলো, তিনি দেশে ফেরার জন্য যে জাহাসে উঠেছিলেন সেই একই জাহাজে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ছিলেন। সময়টি ছিল জুলাই ১৯২১ সাল।
ভারতবর্ষে আইসিএসের গল্প আমরা কমবেশি সবাই জানি। সিপাহী বিদ্রোহ অথাৎ ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনের পর উপমহাদেশে ইংরেজদের শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করতে ১৮৫৮ সালে একটি বিশেষ আইন দ্বারা ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের সূচনা ঘটে। আগে মূলত ভারত শাসনের দায়িত্ব ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে (পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম জেলা প্রশাসক ক্যাপ্টেন লুইন মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে সিপাহী বিদ্রোহ চলাকালে একজন ক্যাডেট হিসেবে ভারতের মাটিতে পা রেখেছিলেন)। প্রথম দিকে পদটি ছিল সাদাদের দখলে। ইতিহাস বলে, ১৯০৫ সালে প্রথমবারের মতো অবিভক্ত বাংলা থেকে ও শতকরা ৫ জন নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়। এক হিসাবে দেখা যায়, ইংরেজরা যখন ভারত ছাড়ছিল তখন মোট আইসিএস অফিসার ছিলেন ৬৮৮ জন। যেখানে ৩২২ জন ভারতীয় ছিলেন বলে জানা যায় (দেখুন, আবদুল মান্নান, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯, কালের কন্ঠ)।
আজকালকার তরুণদের বিসিএস যেমন স্বপ্নের, একসময় আইসিএস ও ছিল সেই সময়ে শিক্ষিত ধনী, জমিদার শ্রেণির সন্তানদের জন্য আগ্রহের কর্মস্থল। একইভাবে সিএসপিও তাই। আইসিএস ও সিএসপি নির্বাচন নিয়ে অনেক গল্প আছে। এই হতে হবে, এই থাকতে হবে, বংশের পরিচয় এমন হতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা ড. ফরাস উদ্দিন এর লেখা 'আপনজন' এ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান থেকে ২১৫জন সিএসপি হয়েছিলেন বলে একটি তালিকা পাই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন হাতেগোনা কয়েকজন।যাদের একজন আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব ড. আকবর আলি খান (দেখুন: সমকাল ১৮ এপ্রিল, ২০১৮)।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন