প্রতিনিয়ত চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অর্থনীতিতে বিশ্ব স্থব্ধ। বাধ্য হয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন অবস্থা আর বেশি দিন থাকবে না। অনেক রাষ্ট্র ইতোমধ্যে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠানেই প্রয়োজন হবে লোকবল। এখন থেকে প্রস্তুতি নিলে চাকরি প্রাপ্তিতে আপনি থাকতে পারেন এগিয়ে। যে খাতগুলোতে লোকবল প্রয়োজন হবে সেগুলোর বিভিন্ন তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের আয়োজন।
তথ্যপ্রযুক্তি : বিশ্বব্যপী তথ্যপ্রযুক্তি খাতে লোকবলের চাহিদা বেড়েছে। এ সেক্টরের প্রবৃদ্ধির হার ৩শ’ শতাংশ। এ খাতে সব ধরনের কাজই করা সম্ভব। করোনা পরিস্থিতিতে আগের চেয়ে মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি বেশি নির্ভরশীল হয়েছে। অনলাইনে কেনাকাটা থেকে শুরু করে লেনদেন করা পর্যন্ত সকল কাজই রিমোট প্রক্রিয়ায়। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গেম ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, থিম তৈরি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, নেটওয়ার্কিং, সাইবার সিকিউরিটি, ডিজিটাল মার্কেটিং, ই-কর্মাস ইত্যাদি। দেশের পাঠ্যক্রমে ইতোমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বই যুক্তি হয়েছে। দেশের সরকারি- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ বিষয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ রয়েছে।
হিউম্যান রিসোর্স : একসময় এইচআর নিয়ে দেশি উদ্যোক্তাদের তেমন আগ্রহ ছিল না। তবে এর কার্যকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর চাহিদা। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সব কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া এবং তাদের কাজের তদারকি করা এইচআরডির কাজ। একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের চাহিদা অনুযায়ী এইচআরডি কোম্পানির প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে থাকে এবং কর্মীদের বেতন কাঠামো, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে এইচআরডি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা এবং এরা যাতে ঠিকভাবে কাজ করে সেদিকেও নজরদারি করে এ বিভাগ। এখানে ক্যারিয়ার গড়তে চায়লে অবশ্যই মাস্টার্স/এমবিএ মেজর-ইন-এইচআর ডিগ্রিধারী হতে হবে। তা হলে চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়া যাবে। কিছু কাজের আগে অভিজ্ঞতা থাকলে আরও ভালো হয়।
ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স : দেশের তরুণদের পছন্দের চাকরির মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর অন্যতম। এর প্রধান কারণগুলো হলো বেতন কাঠামো, চাকরির নিরাপত্তা ও পেনশন। আমাদের দেশে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের পাশাপাশি অর্ধশত বেসরকারি ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চলতি বছর পুরোটাই চাকরির বাজারে ভালো অবস্থানে ছিল ব্যাংকিং সেক্টর। এখানে বিভিন্ন পোস্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতা চাওয়া হয়। তবে এমবিএ/এমবিএম/পোস্ট গ্র্যাজুয়েট/সিএ ডিগ্রিসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়।
টিচিং অ্যান্ড রিসার্চ : দেশে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং দিন দিন এ সেক্টরে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পাশাপাশি আরও অনেক ধরনের লোকবল প্রয়োজন হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বর্তমানে অনেক কোম্পানি রিসার্চ সেন্টার চালু করছে, সেখানেও কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। টিচিং অ্যান্ড রিসার্চে ক্যারিয়ার গড়তে হলে নিষ্ঠাবান হওয়া বাঞ্ছনীয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন স্নাতকোত্তর, এমবিএ, পিএইচডি, সিএসই, ইইউ ইত্যাদি। এ সেক্টরে কাজের মাধ্যমে অনেক সম্মান অর্জন করা যায় এবং ভালো পারফর্ম করতে পারলে ভালো অর্থ উপার্জন সম্ভব। তাই যারা টিচিং অ্যান্ড রিসার্চে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন করে এ সেক্টরে আসা উচিত।
মেডিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস : বর্তমানে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে ওষুধ। তাই এ সেক্টরে প্রতিনিয়ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকবলের প্রয়োজন হচ্ছে। এ সেক্টরে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া এমএসসি, এমবিএ, এম ফার্ম, বি ফার্ম ইত্যাদি শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়। মেডিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে কাজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো মাসিক নির্দিষ্ট বেতনের পাশাপাশি টার্গেট পূরণের ওপর অতিরিক্ত টাকা দেওয়া হয়। বর্তমানে অনেকেই ডিগ্রি পাস করে এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেক্ট : সারাবিশ্বে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আর্কিটেক্টের চাহিদা অনেক বেশি। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশেও বর্তমানে এ সেক্টরের প্রতি নতুনদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেক্টের ওপর বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। এ সেক্টরে চাকরি করতে হলে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, এমবিএ, মাস্টার্সসহ বিভিন্ন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যোগ্যতা চাওয়া হয়।
সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং : সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। যারা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করে, তাদের জন্য এ সেক্টর উপযুক্ত স্থান। এসব ডিপার্টমেন্টে প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন হচ্ছে। এ সেক্টরে চাকরির জন্য সাধারণত বিবিএ, এমবিএ এবং মার্কেটিং, ফিন্যান্স ও হিসাববিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েট চাওয়া হয়। সঠিক জ্ঞান ও পরিশ্রম করলে এ সেক্টরে অল্প সময়ে ভালো অবস্থানে যাওয়া সম্ভব। সূত্র- দৈনিক ইত্তেফাক
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন