১। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকে পার্ট টাইম কাজ করুন। যে দিন থেকে কাজে লেগে পড়বেন, মনে রাখবেন ওই দিন থেকেই ক্যারিয়ার শুরু। এটা আজীবন আপনার মোট অভিজ্ঞতাকে বাড়িয়ে রাখবে। যে কোন পণ্য এক জায়গা থেকে কিনে আরেকজনের কাছে বিক্রি করার কৌশল, কথা বলার কৌশল, টাকা উপার্জনের কৌশল ছাত্রজীবন থেকে জানা থাকলে কর্ম জীবনটা এমনিতেই সোজা হয়ে যাবে।
২। প্রতি সেমিস্টার শেষ হলে একটা প্রতিষ্ঠানে কাজে লেগে পড়ুন। কপি পেস্ট রিপোর্ট দিয়ে ইন্টার্ন না, কমপক্ষে ৫-৭ টা কোম্পানিতে কাজ করুন বন্ধগুলোতে। গ্রাজুয়েশনের আগে এক্সপেরিয়েন্স মাস্ট।
৩। টাকা না, কাজ শিখতে প্রথমে কাজ করুন। কাজ দেখান। কোন একদিন কেউ হয়তো আপনার কাজে খুশি হয়ে প্রথমে ৫০০০ টাকা দিবে। তখন থেকে শুরু হবে আপনার পাওয়ার। পরের যে কোন কাজে বলতে পারবেন, আগে যার ওখানে কাজ করেছেন, তিনি ৫০০০ টাকা দিয়েছে। সে দেবে ৬০০০ টাকা, এভাবেই দাম বাড়ে। যে কাজই করবেন, সততার সাথে করবেন, ভালোবেসে করবেন, নিজেকে উজাড় করে দিয়ে করবেন, তাহলেই ভালো ফল পাবেন।
৪। স্টুডেন্ট লাইফে জব করে অনেকে বিজনেসের লাইন ঘাট বের করে ফেলতে পারে, আপনি তেমন করতে পারলে গ্রাজুয়েশন শেষ করে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। নিজেই জব দিতে পারবেন। তবে সবাই এরকম হয় না। তবে যাই হোক, যে কোন একটা লক্ষ্য জীবনে ঠিক করুন। দুই বা ততোধিক ভাবনা লক্ষ্যভ্রষ্ট করে দিবে।
৫। ট্রেনিং করা ও বই পড়াকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলুন। এই খাতে বিনিয়োগ যতো বাড়াবেন, ততো জীবন সহজ হয়ে যাবে। আর যারা আজ এসব করে পয়সা বিনিয়োগ করছেন, তাদের দেখে আপনি যদি হাসেন, তাহলে আমার অনুরোধ, বুকে পাথর বাঁধেন। খুব দ্রুতই আপনি নিজেই মহা হাসির পাত্রে পরিণত হবেন। টেনে টুনে ক্যারিয়ার বেশিদূর যাবে না শিওর থাকেন। জীবন আপনাকে হাড়ে হাড়ে শিখিয়ে দিবে, আপনি কী মস্ত ভুলটাই না করেছেন।
৬। প্রশ্ন আসতে পারে, কী কী প্রশিক্ষণ করবো? আমার মতে এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারার দক্ষতাটুকু অবশ্যই থাকতে হবে। সেই সাথে আপনি যে ফিল্ডে কাজ করতে চান তার সাথে সম্পৃক্ত প্রশিক্ষণ করে নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারেন।
৭। ভাইয়া, কোন কোন বই পড়বো? আমার পছন্দের জীবন সহজকারক ও ক্যারিয়ার বিষয়ক বইয়ের নাম দিচ্ছি। The 7 Habits of Highly Effective People- Stephen R. Covey, Rich Dad Poor Dad- Robert Kiyosaki and Sharon Lechter, The Leader Who Had No Title- Robin Sharma, The Monk Who Sold His Ferrari- Robin Sharma, Eat That Frog- Brian Tracy, The Art of The Deal- Donald Trump and Tony Schwartz, Man’s Search for Meaning- Victor Frankl, The Subtle Art of Not Giving a F*ck- Mark Manson। যে কোন বই পড়ুন, পড়তে আপনাকে হবেই, হয় বই নয়তো পিছিয়ে, কোনটা পড়বেন সিদ্ধান্ত আপনার হাতে। ইংরেজি বই পড়ার সুবিধা একসাথে বইয়ের মেসেজ পাওয়া যায় আবার সাথে ইংরেজি চর্চাটাও হয়ে যায়।
elon musk, life hacks, life tips, productivity, productivity tips
৮। আপনার আয় কত হবে তা নির্ভর করে আপনি কোন দশ জন মানুষের সংস্পর্শে আছেন তার উপর। কারণ ওই ১০ জন মানুষের গড় আয় হচ্ছে আপনার আয়। কাজেই ভালো বন্ধু নির্বাচন করুন। যাদের সাথে আপনার মতে মিলে। তাদের ভিতর থেকে কাউকে বেস্ট ফ্রেন্ড নির্বাচন করুন। তার সাথে নিজের পরিকল্পনাগুলো শেয়ার করতে পারেন। নিজেকে হাল্কা লাগবে। তবে, যাকে তাকে গোপন কথা না বলাই ভালো।
৯। জীবনে কী হতে চান সেই লক্ষ্য স্থির করুন, সেটাকে কাগজে লিখে রাখুন, সেটার ডেড লাইন সেট করুন, আপনার সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য আপনার হাতে কী কী শক্তি আছে সেটা যাচাই করুন, কী কী নেই সেটা চিহ্নিত করুন। এক এক সময় এক এক লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন না। যেটা ঠিক করবেন, সেটা নিয়ে লেগে থাকবেন। কীভাবে সেই লক্ষ্য অর্জন করবেন, তার একটা লিস্ট করে নিন। লিস্টের কোন কোন কাজ কবে নাগাদ শেষ করবেন সেটাও ঠিক করুন। আজকের কাজ আপনাকে আপনার লক্ষ্যের দিকে কতটুকু এগিয়ে দিচ্ছে সেটা ঠিক করুন।
১০। একজন ভালো কোচ নির্ধারণ করুন, যার তার কাছ থেকে পরামর্শ নিবেন না, কারণ এতে করে আপনি আরো কনফিউজড হয়ে যাবেন। এমন কাউকে কোচ হিসেবে ভাবুন যিনি আপনাকে জানেন, বোঝেন এবং আপনাকে প্রশ্ন করে করে উনি আপনার ভেতরের সত্তাকে জাগিয়ে তুলতে পারেন।
১১। ছাত্রজীবনে ঘুরে বেড়ান, শুধু বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকলে হবে না। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরুন, মানুষের সাথে মিশুন, এক এক জায়গার পরিবেশ ও মানুষের আচরণগত পার্থক্য লক্ষ করুন। সম্ভব হলে দেশের সবগুলো জেলা ছাত্রাবস্থায় ঘুরে নিন। দেশের বাইরে একবার ঘুরে আসুন। আর এই সবগুলো ট্রিপের টাকা নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে যেন আসে। ধূমপান, মদ্যপান থেকে শুরু করে যে কোনো ধরনের নেশা থেকে নিজেকে সচেতনভাবে দূরে রাখুন। ধর্মীয় শিক্ষা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১২। ছাত্র জীবন থেকে আয়ের অনেক উপায় আছে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ফ্রিল্যান্সিং, পত্রিকায় লেখালেখি, এডিটিং, ফটোগ্রাফি, ভিডিও মেকিং, এসবের মাধ্যমে সহজেই অর্থ আয় করা সম্ভব। পার্ট টাইম জবের মাঝে আছে বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্টে বা সুপার শপে কাজ করা। আমাদের বাসার পাশের রেস্টুরেন্টের ছেলেগুলা ভার্সিটির থার্ড ইয়ারে পড়ে। সেদিন সিলেটের বিছানাকান্দি গেলাম, মাঝি ছেলেটা স্কুলের ফাঁকে ফাঁকে নৌকা বায়। বাজারে একটা কলেজে পড়া ছেলেকে চিনি, সে ভোর রাতে উঠে আড়ত থেকে মাছ এনে বিক্রি করে, এরপর কলেজে যায়। দুনিয়ার কোন কাজ ছোট না। কাজেই আজ থেকেই লেগে পড়ুন পছন্দের যে কোন কাজে। কিছু না পারুন, অন্তত দু’টো টিউশনি করান। নিজের খরচ নিজে চালান।
১৩। একটা বানরের সামনে আপনি যদি কলা আর ১০০০ টাকার একটা নোট রাখেন, বানরটা কলা নিবে। কারণ তার এই বুদ্ধি নাই, যে টাকা দিয়ে আরো অনেকগুলো কলা কেনা সম্ভব। তেমনি আপনার জীবনে চলার পথেও কোন কাজটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটা কম গুরুত্বপূর্ণ সেটাও আপনাকেই বুঝতে হবে। ছোটখাটো অনেক বিষয় জীবনে ছাড় দিতে হবে, বড় কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য। লোভ এবং লাভের মাঝে পার্থক্য বুঝতে হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন