একটি দৃষ্টিভঙ্গির গল্প শুনুন, জঙ্গল থেকে দুরন্ত-প্রাণ হাতি শাবককে ধরে এনে ৬ ফুট লোহার শিকল দিয়ে শক্ত পাটাতনের সাথে বেঁধে রাখা হলো। দেখা গেল প্রথম দিকে শিশু-হাতি শিকল ছেঁড়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সহজাত কারণে এতো ছোট শরীর দিয়ে হাতি শাবক জিঞ্জির ভাঙতে পারেনি। বারবার ব্যর্থ চেষ্টা করার ফলে উল্টো তার পা-ই রক্তাক্ত হয়। ফলে এক সময় এই গন্ডি ও বন্দীত্বের কাছে হাতি শাবক অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ঠিক এভাবেই অনাকাঙ্খিত ব্যর্থতার কারণে হাতি শাবকের মাঝে তৈরী হয় সংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাসের। একপর্যায়ে হাতি শাবকটির মাঝে একধরণের ভ্রান্ত বিশ্বাস আস্তকূড়ে অবস্থান তৈরি করে। সে বিশ্বাস করতে শুরু করে, এই গন্ডি -এই জিঞ্জির থেকে তার মুক্তি নেই। এটাই তার চলাচলের সীমারেখা, এটাই তার নিয়তির লিখন।
এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের ফলে দেখা গেছে হাতি শাবকটি বিশালদেহী পর্ণাঙ্গ হাতিতে পরিণত হওয়ার পরও শিকল দিয়ে তাকে ছাগল বাঁধার খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেও সে ৬ ফুট বৃত্তকেই তার পৃথিবী ধরে নেয়। যখনই শিকলে টান পড়ে তখনই সে তার বৃত্তের আরো ভিতরে প্রবেশ করে। তখনো সে তার আত্মশক্তি ও শারিরীক সক্ষমতা সম্পর্কে শাবক থাকাকালীন সময়ের মধ্যেই পড়ে থাকে। তার মাঝে এমন ভ্রান্ত-বিশ্বাস তাকে বদ্ধমূল এই ধারনার মাঝেই আটকে রেখেছে যে এর চেয়ে আর এগুনোর সাধ্য তার নেই। ফলশ্রুতিতে দেখা গেছে সার্কাস মেলায় আগুন লাগলেও হাতি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, কিন্তু তার শিকল ভেঙে পালানোর চেষ্টা করে না। এর কারণ ভ্রান্ত-বিশ্বাস তাকে সেখানেই দাঁড় করিয়ে রাখে। যখন তার দেহের শক্তি দিয়ে একটানে খুঁটিসহ সবকিছু উপড়ে ফেলতে পারে, তখনও সে ভাবে এই ৬ ফুট বৃত্তই তার নিয়তি। প্রকৃত পক্ষে মানুষের জীবনের অবস্থাও অনেকটা এরকম প্রতিটি মানুষের, পুরো জাতির বিপুল সম্ভাবনা, শক্তি ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সংস্কার, ভ্রান্ত বিশ্বাস, শোষক ও পরাভাববাদীদের আরোপিত মিথ্যা ধারণার শৃঙ্খলে আমরা নিজেদেরকে বৃত্তবন্দী বা গন্ডিবদ্ধ করে ফেলেছি। দুর্দশাগ্রস্থ-গ্লানিকর জীবনকেই আমরা নিজেদের ভাগ্য/নিয়তি হিসেবে মেনে নিচ্ছি। একারণে সার্কাসের হাতির মতই পুড়ে মরে গেলেও শিকল ভাঙার কোন চেষ্টা করছি না। কিন্তু শুধুমাত্র একবার এই সংস্কার ও ভ্রান্ত-বিশ্বাস ঝেরে ফেলে দিলে দেখবো প্রত্যেকেই আমরা এক বিপুল শক্তির আধার। আমাদের প্রত্যেকের মাঝে সমীবদ্ধতাকে অতিক্রম করার সবরকম শক্তির উৎস রয়েছে। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে তা কাজে লাগাতে পারলেই সফলকাম হওয়া সম্ভব। আর এই ভ্রান্ত-ধারণার শিকল ভেঙে মুক্ত বিশ্বাসে উপনীত হওয়াটাই হচ্ছে মানুষের জীবনের সার্থকতা। মনে রাখতে হবে, মুক্ত বিশ্বাস হচ্ছে সকল সাফল্য ও অর্জনের ভিত্তি। বিশ্বাসই রোগ নিরাময় করে, ব্যর্থতাকে সাফল্যে আর অশান্তিকে প্রশান্তিতে রূপান্তরিত করে। আত্মবিশ্বাস মানুষের মেধাকে বিকশিত করে, যোগ্যতাকে কাজে লাগায়, দক্ষতা সৃষ্টি করে। মুক্ত বিশ্বাস থেকেই শুরু হয় মানুষের মানবিকতার উত্থান-পর্ব। তখনই সে বুঝতে পারে, সে সৃষ্টির সেরা, আশরাফুল মখলুকাত।
বিশ্বাসীরাই নিজের অসীম শক্তি ও সম্ভাবনাকে বুঝতে পারে। লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি, কাপুরুষতা ও প্রবৃত্তির শৃখল যে অনন্য মানবসত্তাকে বন্দী করে রেখেছে বিশ্বাসের কারণেই তা’ থেকে নিজেকে মুক্ত করার শক্তি তার মধ্যে জš§ নেয়। ডিজনি বেশ কয়েকটি মারাত্মক জনপ্রিয় মোবাইল গেমসের নির্মাতা। ডিজনি ইন্টারঅ্যাক্টিভের মোবাইল সার্ভিস প্রোডাক্টসের সাবেক পরিচালক রাজিব বেহেরা। ১০০ জন কর্মীর স্টুডিওতে অসংখ্য গেম বানানো হয়েছিল তারই নেতৃত্বে। কর্মজীবনে এমন বিশাল একটি প্রতিষ্ঠানে সফলতা ও ব্যর্থতাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন বেহেরা। দিনে ১০ ঘণ্টা কঠিন পরিশ্রম করে তিনি সফল হন। তবে তার সফলতার পেছনে কয়েকটি জিনিস কাজ করেছে যেগুলোকে তিনি মূলমন্ত্র বলে বর্ণনা করেছেন। তার সফলতার মূলমন্ত্রগুলো অন্যদের জন্যও পথপ্রদর্শক হতে পারে। তিনি তাঁর জীবন থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতায় বলেছেন- ব্যর্থতার দায় নিজের কাঁধে নিতে হবে। এ মানসিকতা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। ব্যর্থতা মেনে নেওয়ার মাধ্যমে ভুল চিহ্নিত করে নিজেকে আরো দক্ষ করে তুলুন। বিশ্বাসযোগ্যতা ব্যর্থতায় ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম শক্তি। ব্যর্থতা মেনে নেওয়ার মাধ্যমে ভুল চিহ্নিত করে নিজেকে আরো দক্ষ করে তুলুন। শুরুতেই আসন্ন সম্ভাব্য সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এতে আশপাশের মানুষ আপার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাবেন। পরিকল্পনা নিñিদ্র থাকলে প্রাণোচ্ছলতা নিয়ে কাজ করতে পারবেন। যেকোনো কাজে আগে ঝুঁকি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এ কাজে পা বাড়াবেন কিনা। এতে নেতৃত্বের ওপর বিশ্বাসযোগ্যতা আসে। ভুল হবেই। আর তা থেকে শিক্ষা নিতে ভুল করবেন না। এ শিক্ষা ভবিষ্যতে আপনাকে ভুল থেকে দূরে রাখবে। কোনো কাজে সফল নাও হতে পারেন। আর তা না হতে পারলে আবারো নতুন পরিকল্পনায় ফিরে আসতে হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন