বায়ুদূষণ ঢাকা শহরে এক মরণঘাতী সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। নির্মল ও সতেজ বায়ু আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবজগৎ ছাড়াও উদ্ভিদ, পানি ও মাটির ক্ষেত্রে নির্মল বায়ু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিল্পায়নের কারণে দিন দিন যান্ত্রিকতার যুগে প্রবেশ করছি আমরা, আর বায়ুদূষণের মাত্রাও বেড়ে চলেছে।
এটা অনস্বীকার্য যে, ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে অবকাঠামো নির্মাণ এবং যানবাহন ও কলকারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বায়ুদূষণ বেড়ে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, দেশে কয়লা পোড়ানো হয় এমন শিল্পকারখানার সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশে যে নির্মাণকাজ চলছে, তাতে প্রচুর ধুলা ও ধোঁয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে বাতাসে ওই ক্ষুদ্র কণাগুলো এমনিতেই বেশি পরিমাণে পরিবাহিত হয়। আর এ সময়ে বেশি নির্মাণকাজ চলে এবং দেশের সব ইটভাটা চালু থাকে। ফলে দূষণের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। অন্যদিকে শীত মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় এসব সূক্ষ্ম বস্তুকণা বাতাসে ভাসতে থাকে, যা অক্ষত অবস্থায় মানবদেহে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে থাকে। তবে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে বাতাসে গ্যাসীয় পদার্থ ও বস্তুকণা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় থাকে।
শুষ্ক মৌসুমকে নির্মাণকাজের উপযুক্ত সময় বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে এ সময়ে কাজও বেশি চলে। কিন্তু নির্মাণকাজের সময় যেসব নিয়ম মানার কথা সেগুলো সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি মানেন না কিংবা মানার চেষ্টাও করেন না। যে নির্মাণকাজগুলো হয়, সেখানে সকাল ও বিকাল দুই বেলা নির্মাণসামগ্রী, বিশেষ করে বালু ও ইট, পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয় না, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখার চিন্তাও কেউ করে না। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে মেট্রোরেল ও উড়াল সড়ক নির্মাণ দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং রাখবে। কিন্তু নির্মাণকারী সংস্থাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয় না। ঢাকা শহরে ধুলা নিয়ন্ত্রণে সকালে নিয়মিত সড়কে পানি ছিটানোর কথা থাকলেও তা কতটুকু মানা হয় সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি কর্পোরেশন এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সমন্বয়ের মাধ্যমে এ বিষয়টি প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।
দূষিত বায়ু মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। সূক্ষ্ম বন্তুকণা শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণের ফলে সাময়িকভাবে শ্বাসকষ্ট, শ্বাসযন্ত্রে প্রদাহ, চোখ জ্বলা ও ফুসফুসের রোগ দেখা গেলেও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বেশি। এটি দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ ছাড়াও ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি, লিভার ও মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে, এমনকি অকাল মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। পরিবেশ ও প্রতিবেশ আমাদের জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক। বিশুদ্ধ বায়ু ছাড়া সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। বায়ুদূষণে সচেতনতার অভাব বেশ প্রকট। সচেতনতা সৃষ্টি করে দূষণের মাত্রা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। দূষণ রোধে সরকারের উদ্যোগকে যেমন আরও ত্বরান্বিত করতে হবে, পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে। তরুণ সমাজ এগিয়ে আসলে একাজটি করা সম্ভব অল্প দিনেই। সবার সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একটি দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন