কাজের আবার নারী-পুরুষ কী! কাজ তো কাজই। দেখিয়ে, শিখিয়ে দিলে সবাই সব পারে বলে মনে করেন মুক্তা বেগম। বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজধানীর তেজগাঁও রেলক্রসিংয়ে গেটকিপার হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
ছোটবেলায় জ্বরে মুক্তা বেগমের ডান পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। খুঁড়িয়ে হাঁটেন। কিন্তু এই প্রতিবন্ধকতা মুক্তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। রেলওয়ের বড় স্যারেরা যখন জানতে চেয়েছেন, ক্রসিং বার মুক্তা নামাতে পারবেন কি না; দ্বিধা করেননি, মুক্তা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘পারব স্যার।’
রাজধানীতে দিনে শতাধিক ট্রেন চলাচল করে। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া বা ঢাকায় ঢোকা প্রায় সব ট্রেনই তেজগাঁও রেল ক্রসিং পার হয়। ক্রসিং বার নামানোর পাশাপাশি নিরাপদ দূরত্বে মানুষ ও যানবাহন সরানোর দায়িত্বও পালন করতে হয় মুক্তা বেগমকে। সপ্তাহে ছয় দিন দিন আট ঘণ্টা করে তিনি কাজ করেন। আট মাস আগে নিয়োগ পেয়েছেন গেটকিপার পদে।
মুক্তার জন্ম ঢাকায়। অভাবের সংসারে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ হয়। বর্তমানে এক মেয়ে ও এক ছেলের মা তিনি। থাকেন শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে। মুক্তা বেগম জানালেন, স্বামীর আয়ে সেভাবে সংসার চলে না। বাড়িভাড়া, সংসার চালানো, সন্তানদের দেখাশোনা তাঁকেই করতে হচ্ছে।
নারী হয়ে কিছুটা ভিন্ন ও নতুন এ পেশায় কাজ সম্পর্কে মুক্তার সরাসরি উত্তর, ‘কাজ তো কাজই। মহিলাগো সবাই অবহেলা করে। মহিলারা কাজ পারে না, এমন কোনো কথা নাই। তবে নতুন যে-ই করুক, তারে তো দেখাইতে হইব, শিখাইব।’ কাজ করতে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানিয়ে মুক্তা বললেন,‘ এখানে অন্য যাঁরা কাজ করেন তাঁরা প্রথমে দুই দিন দেখায়ে দিছেন কীভাবে কী করতে হয়, এখন সবই পারি। কর্মকর্তাদের বলে তেজগাঁও ক্রসিংয়ের একটি টয়লেট ব্যবহার করতাছি।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ঢাকা) মো. মাইনুল ইসলাম বললেন, ‘ মুক্তা বেগম গেটকিপার হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ পেয়েছেন। রেলের কাজগুলো একটু ভিন্ন ধরনের। এখানে নারীরা কতটা ফিট হবেন, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল। কিন্তু সম্প্রতি গেটকিপার হিসেবে সারা দেশে সাতজন নারী নিয়োগ পেয়েছেন। তাঁরা ভালো করছেন। কাজে ফাঁকি দেন না তাঁরা।’
মুক্তা বেগম ছাড়া বাকি ছয়জন দেশের বিভিন্ন রেল স্টেশনের অধীনে রেলক্রসিংয়ে কাজ করছেন। ঢাকায় শুধু মুক্তা বেগমই একমাত্র নারী হিসেবে কাজটি করছেন। মো. মাইনুল ইসলাম বললেন, ‘মুক্তা বেগম পায়ের সমস্যা নিয়ে কাজটা করতে পারবেন কি না, জানতে চাইলে উনি বলেছেন, “পারব স্যার, কোনো সমস্যা নেই।”’
দৃঢ়তা নিয়ে কাজটা শুরু করেছেন মুক্তা বেগম। শিফটের কাজে প্রায়ই তাঁকে সারা রাত এখানে থাকতে হয়। আবার কখনো বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়। তবে ভয় পান না তিনি। কাজ শেষ হলে বাস ধরেন বাড়ি ফেরার জন্য। ঘর সামলিয়ে পরদিন আবার ফেরেন কাজে। সূত্র- প্রথম আলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন