"গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান" স্লোগানটা আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। তার কারণ একটা সময় গাড়ি,অফিস,পোস্টার,দেয়াল কিংবা রেডিও টেলিভিশন এসবে প্রচার করা হতো। কিন্তু এখন আর আগের মতো স্লোগানটা প্রচার বা চোখে পড়ে না। তাহলে কি এই স্লোগানের যথাযথ বাস্তবায়ন হয়ে গেছে? নাকি প্রচারণায় অলসতা কিংবা অন্য কোনো কারণ! আমরা জানি, প্রচারেই প্রসার ঘটে। আসলেই। কথাটার বাস্তবতা মিলে যখন আমরা থাকাই "আপনার শিশুকে স্কুলে পাঠান" বা "শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড" "সবার জন্য শিক্ষা" এরকম স্লোগানের দিকে। এই স্লোগানও ঠিক প্রচার করা হতো নানাভাবে। সমাজ,দেশ,সরকার,জনগণ সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এক্ষেত্রে আমাদের সফলতা সত্যিই গর্ব করার মতো। কিন্তু গাছের ক্ষেত্রে...?
এখন কথা হচ্ছে, একটা দেশের আয়তনের কমপক্ষে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু আমাদের বনভূমি আছে ১৭ শতাংশ। যা আমাদের দেশের পরিবেশ রক্ষায় একেবারেই অপর্যাপ্ত পরিমাণ হিসেবে বিবেচিত। এই ১৭ শতাংশের বাস্তব চিত্র দেখলে সবাই বিস্মিত হবেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে বনভূমি আছে ৪৩, খুলনায় ৩৮, ঢাকায় ৭, সিলেটে ৬, বরিশালে ৩, রাজশাহীতে ২ শতাংশ। চট্টগ্রাম ও খুলনা ছাড়া সারাদেশে বনভূমির পরিমাণ খুবই নগণ্য।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহজ মাধ্যম হচ্ছে বৃক্ষরোপণ। কারণ বৃক্ষরোপণ আন্দোলনে দেশের প্রতিটি মানুষকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ রয়েছে। অনেকেরই ধারণা, গাছ লাগালে কৃষিজমি কমে যাবে। এটা ঠিক নয়। বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত জায়গা, রাস্তাঘাট, সরকারি পতিত জায়গা অথবা নদীর দু'পাশে, রেললাইনের দু'পাশ ছাড়াও এরকম আরো অসংখ্য জায়গা আছে যেখানে আমরা বৃক্ষরোপণ করতে পারি। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এ দেশকে অবারিত সবুজে পরিণত করা সম্ভব। পথেঘাটে ফল হবে, ফুল ফুটবে। পাখিদের কলরবে মুখরিত হবে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা স্বর্ণ প্রসবিনি আমাদের এই সোনার বাংলা।
আজকাল পত্র পত্রিকা ইলেকট্রনিক কিংবা অন্যান্য খবরের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আমাদের চোখে পড়ে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা। কিন্তু কেন? কোনো কারণ ছাড়াই অথবা সামান্য কারণ দেখিয়ে বন উজাড় করে ফেলা, বাস্তবিক কারণে গাছ কেটে থাকলেও পুনরায় দুটো বা তিনটি গাছ না লাগানো। অসাধু এবং স্বার্থান্বেষী মহলে দ্বারা উজাড় করা গাছপালা এবং প্রাকপ্রাকৃতিক নানা সম্পদের ধবংস করার দৃশ্য আমাদের কারো অজানা নয়। সুতরাং আমরাই এর জন্য দায়ী। গাছপালা শুধু কার্বন ড্রাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে উপকারের পরিসমাপ্তি ঘটায়, তা কিন্তু নয় । বরং বড় বৃক্ষ বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বড় বড় গাছপালা আজ যেন খুঁজে পাওয়া দুস্কর। পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্যই প্রতিদিন বজ্রপাতে লোক মারা যাচ্ছে।
গাছ আমাদের পরম বন্ধু; মানবজীবনে গাছের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। কাঠ, ফল থেকে আরম্ভ করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু দেখতে পাচ্ছি, সবই গাছের অবদান। অথচ আমরা ক’জনই বা বুঝি গাছের গুরুত্ব। আমরা শুধু মুখেই আওড়াই ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান।’ দিনদিন দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। গাছের বংশবৃদ্ধি দূরের কথা- নির্বিচারে ধ্বংস করছি সবুজ বনানী। সবুজ বনানীকে টিকিয়ে রাখতে হলে ’বনায়নের’ কোনো বিকল্প নেই। বনায়নের উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকাল। অন্য সময়েও বনায়ন করা যায়। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালনে আরো বেশি উদ্যোগী হওয়া এখন সময়ের দাবি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে সবার উচিত বৃক্ষরোপণ করা। সবুজ বনানী সৃষ্টি করা। বনায়ন করলে নিজের যেমন লাভ তেমনি দেশের অর্থনীতির ভিতও হবে মজবুত। পরিকল্পিত বনায়নই হতে পারে আপনার আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আয়ের উৎস। এই বর্ষায় আপনি কি কোন গাছ লাগিয়েছেন? দেশকে সবুজে ভরিয়ে দিতে আপনার লাগানো একটি গাছই বদলে দিতে পারে আমাদের প্রকৃতি। তরুণ প্রজন্মই পারে সবুজ পৃথিবী গড়তে, দেশকে সবুজে ভরে দিতে।
লেখকঃ শিক্ষার্থী,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন