ব্যক্তিগত কারণে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাননি, দুর্ঘটনা কারো স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে, কেউ সাধারণ পরিবার থেকে এসেও অনেক বাধা সয়ে লড়ে গেছেন স্বপ্নের সঙ্গে। তাঁরা প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র হিসেবে পেয়েছেন ‘চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’। এসব অসাধারণ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর সাফল্যের গল্প নিয়ে লিখেছেন সাইফুল ইসলাম
বাবা তাঁর স্কুলশিক্ষক। ফলে ছোটবেলা থেকেই বই-খাতা নিয়ে অভিজিতের বসবাস।পড়েছেন নামকরা নটর ডেম কলেজে। এরপর ছোটবেলার ইচ্ছা পূরণ করতে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে লাগলেন। ভারতের মতিলাল নেহরু ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমএনএনআইটি) ‘আইসিসিআর’ স্কলারশিপও পেলেন। পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে অভিজিত সাহা চলে গেলেন ভারতের এলাহাবাদে। তবে বিদেশের পরিবেশ তাঁর সয়নি। অসুস্থ হয়ে গেলেন। কোনো কিছুই ভালো লাগত না। মাসদুয়েক পর বাধ্য হয়ে দেশে ফিরতে হলো। তত দিনে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময় শেষ। বন্ধুরা ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগরসহ ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছেন। ফলে তাঁকে ইউআইইউতে (ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি) ভর্তি হতে হলো। পড়ার বিষয়টিও ভালো—‘ইইই’ (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং)। প্রথম সেমিস্টার থেকেই পড়ালেখায় মনোযোগ দিয়েছেন তিনি। পড়ালেখাই তাঁর ধ্যানজ্ঞান হলো। ফলে জিপিএ ৪ পেতে বেগ পেতে হয়নি। তবে ভালো ছাত্র বলে দ্বিতীয় সেমিস্টার থেকেই নিজের অ্যাসাইনমেন্টগুলো তো করতে হলোই, বন্ধুদের গুলোও দেখিয়ে দিতে হলো। বন্ধুরা সব সরকারিতে পড়ছে, আমি স্কুলমাস্টারের ছেলে হয়েও প্রাইভেটে—ফলে আগে যেখানে পরীক্ষার আগ মুহূর্তে পড়তেন, বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে দিনের পড়া দিনেই শেষ করতে লাগলেন তিনি। ভালো ছাত্রটিকে সহযোগিতা করতে কার্পণ্য করেননি শিক্ষকরাও।
সব সেমিস্টারে জিপিএ ৪ পেয়েছেন, শুধু দশম সেমিস্টারে ৩.৮৮ তুলতে পেরেছিলেন। তাঁর মোট সিজিপিএ হলো ৩.৯৯। কিভাবে এত ভালো করেছেন—এ প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘সেমিস্টার ছুটিতেও বাড়ি যাইনি। বছরে এক কী দুবার মোটে গেছি। বাকি সময় পড়েছি। মা-বাবার আশা তো ছিলই। আর আমাদের রেজিস্ট্রার অফিসের শিক্ষক সালাউদ্দিন আহমেদ প্রতি সেমিস্টারে রেজিস্ট্রেশন করতে গেলেই ফল জিজ্ঞাসা করতেন। কেউ ভালো করেছে শুনলেই কেক, কোকসহ নানা কিছু খাওয়াতেন। তাঁকে খুশি করার জন্যও ভালো করতে মন চাইত। আমাদের বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফাইয়াজ খানও কোনো সমস্যা হলেই সহযোগিতার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া বিভাগের সব শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে সাহায্য করেছেন।’
প্রতিটি সেমিস্টারের শত ভাগ ওয়েইভার পাওয়া এ ছাত্রটি শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে এক শিক্ষাসফরে ছেঁড়াদ্বীপে দুই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন। এখনো সে অভিজ্ঞতা তাঁর ক্যাম্পাসজীবনের মধুর স্মৃতি হয়ে আছে। ইউআইইউর চতুর্থ সমাবর্তনে তিনি আলাদা আসনে বসে চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছেন। এখন তিনি নিজের বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে গবেষণা করবেন এই অদম্য মানুষটি। সৌজন্যে: ক্যাম্পাস টাইমস
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন